মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা অপকারিতা-মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়

মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এই সকল তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য অনেক খুজাখুজি করেছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য পান নাই। এই আর্টিকেলে আমরা মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে আপনাকে সঠিক তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।

আপনি যদি কিছুক্ষন অপচয় করে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে, মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা করি, আমরা আপনাকে এমন কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব যার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

ভূমিকা

মধু খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এক প্রকার তরল পদার্থ ,যা শ্রমিক মৌমাসি বিভিন্ন ফুল থেকে আহরণ করে।সঠিক নিয়মে , সঠিক সময়ে , পরিমাণ মত মধু খেলে আমাদের শরিরের অনেক উপকার হয়। মধুকে “মহাঔষধ” ও বলা হয় এছাড়াও মধু দিয়ে রূপচর্চা ভাল হয়। তাহলে আসুন আমরা মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

মধুর পুষ্টিগুণ

মধুতে প্রায় ৪৫ধরণের খাদ্য উপাদান আছে । তার মধ্যে কয়েকটি তুলেধরা হলো।প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে
  • ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ
  • ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ
  • ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ
  • ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টেজ
  • ২২শতাংশ অ্যামাইনো এসিড
  • ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ
  • ১১ শতাংশ এনকাইম
  • ২৮৮ক্যালরি
  • ভিটামিন বি১
  • ভিটামিন বি২
  • ভিটামিন বি৩
  • ভিটামিন বি৫
  • ভিটামিন বি৬
  • আয়োডিন
  • জিংক
  • কপার
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান
  • অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান
  • ভিটামিন সি
  • লৌহ
  • পানি

মধু খাওয়ার উপকারিতা

মধু অতি সুপেয় ঘন তরল পদার্থ। মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা সকলের জানা দরকার। চলুন আমরা  এখন মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানি।

হজম সহায়কঃ মধুতে প্রায় ৮২.৫ গ্রাম শর্করা থাকে , ফলে সহজেই হজম হয়। মধুতে থাকে ডেক্সট্রিন নামক একটি উপাদান ,যা সরাসরি রক্তে মিশে যায় এবং খুব দ্রুত কাজ শুরু করে। তাই যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য মধু খুব উপকারি।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে যথেষ্ঠ পরিমাণে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই বিটামিন বি-কমপ্লেক্স ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লত্ব দূর করতে প্রতিদিন ভোর বেলা ১চা-চামচ খাঁটি মধু খান।

রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে, ফলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ, এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়ঃ মধুতে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধি উপাদান আছে। এই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতর ও বাইরের সকল প্রকার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করার শক্তি যোগায়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহ রক্ষা পাই।

হৃদরোগঃ এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদ্রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাহলে বুঝলেন তো মধু কতটা মাহা ঔষধ।

রক্ত পরিষ্কারকঃ আপনি র্ক পরিষ্কার করতে চান। তবে এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। প্রতিদিন পেট খালি করার আগে এই মিশ্রণ খান। এটা আপনার রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া আপনার রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করবে।

রক্ত উৎপাদনে সহায়তাঃ মধুতে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ আছে। এই আয়রন রক্তের উপাদান- আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট কে অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।

যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ আপনি কি যৌন সমস্যাই ভুগছেন। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধুর সাথে ১ টি রসুনের কোয়া খান। আপনার যৌন সমস্যার ানেকটাই সমাধান পাবেন। এছাড়াও বিশেষ করে ইরেকটাইল ডিসফাংশন ও প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন সমস্যা সমাধানে এই পদ্ধতি অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ মুখগহ্বরের সকল সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে মধু, যদি আপনি এর যথেষ্ট ব্যবহার করেন। মধু দাঁতের উপরে ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়। দাঁতে পাথর জমতে বাধা প্রদান করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত। মুখের ভিতরে কোন কারনে যদি ক্ষত সৃষ্ট হয় সে ক্ষত ভড় করতে মধু সহায়তা করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে বাধা প্রদান করে।

তাপ উৎপাদনেঃ শীরকে গরম রাখতে অস্তাত হচ্ছে মধু। ১-২ চা-চামচ মধু এক গ্লাস গরম পানির সাথে খেলে শরীর ঝরঝরে ও সতেজ হয়।

পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ মধু চোখের জন্য বেশ উপকারি। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি।প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তা দেহের অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে।

মধু খাওয়ার অপকারিতা

মধুর উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা এমন মানুষ প্রায় খুজে পাওয়াই জাবেনা। চিনির বিকল্প হিসাবে মধু ব্যবহার করা যাই। কারণ মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ রয়েছে। তবে যে কোন জিনিসই মাতাতিরিক্ত ভাল না। তাই অধিক পরিমাণে মধু খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশ িহতে পারে। চলুন জেনে নিই মাত্রাতিরিক্ত মধু খেলে কি কি ক্ষতি হয়।

ব্লাড সুগার লেভেলঃ মধুকে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় এ ব্যাপারে কোন ভাবার অবকাশ নেই। তবে এটা মনে করলে ভুল হবে যে, মধু ্েকেবারেই চিনি মুক্ত। এই প্রাকৃতিক মিষ্টিতে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে সক্ষম। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত পরিমাণ মধু খাওয়া ভাল এবং মধু ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

পেটে ব্যথাঃ প্রতিদিন অত্যধিক মধু খেলে পেটে ব্যথাও হতে পারে। তাই যারা প্রতিদিন মধু খান, তারা পরিমাণটা সীমিত রাখুন।

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ অত্যধিক মধু খাওয়ার আরেকটি খারাপ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ চা চামচ মধু খেতে পারেন। এর চেয়ে বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ওজন বৃদ্ধিঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিনির পরিবর্তে মধুই সকলের প্রথম পছন্দ। ওজন কমাতে গরম পানি বা লেবুর রসের সঙ্গে মধু খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মধু খেলে অথবা পানি ও লেবুর রসের সঙ্গে না মিশিয়ে খেলে ওজন কমার বদলে বাড়তে পারে।

রক্তচাপঃ মধুতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মধু খেলে হাইপোটেনশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়

মধু পছন্দ করেনা এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। মধু জিনিসটা সবারই প্রিয়। যেহেতু এটা মিষ্টি একটি খাবার তাই এটা সকলেই সেবন করে থাকেন। কিন্তু মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি আপনি জানেন? মধু খাওয়ার সাথে সাথে মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে মধু খেলে একাধিক উপকার পাবেন। তাহলে আর দেরি না করে এক নজরে দেখে নিন মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম –

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গরম জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতেও গরম জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু মধুর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপরে পৌঁছালে মধু বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হবে গরম জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেবন করার সময় জল যেন বেশি গরম না হয়।

সকাল বেলায় খালি পেটে মধুর সঙ্গে হালকা গরম জল মিশিয়ে সেবন করলে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে মধু। তাই প্রতিনিয়ত সকালবেলায় মধু খেলে এর উপকার বেশি পাওয়া যায়। সবসময় মনে রাখতে হবে জল যেন বেশি গরম না হয়। কারণ মধু তাপমাত্রার স্পর্শ পেলেই বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

মধু দিয়ে রূপচর্চা

মধুতে রূপচর্চা করার মত নানা রকমের পুষ্টিগুণ রয়েছে ,যা রূপচর্চায় মোটামুটি ভাল কার্যকর। আসুন আমরা মধু দিয়ে কি কি রূপচর্চা করতে পারি সেটা জানি।

ব্যণ দূর করতেঃমধুতে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে । এই অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার কারণে সৃষ্ট ব্রণ সমস্যা দূর করে। যে যে জায়গায় ব্রণ উঠেছে সেই জায়গায় প্রতিদিন মধু লাগিয়ে ১৩-১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর হবে।

মুখের কালো দাগ দূর করতেঃ মধুতে অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে।অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। নিয়মিত ১ চামচ নারিকেলের বা জয়তুনের তেলের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ত্বকের কালো দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্ব আরও উজ্জল ও মলিন হয়।

রোদের পোড়া ভাব কমাতেঃ মধুতে অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি উপাদান ত্বকের উপর পড়া রোদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

লোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কারঃ ত্বকে নানা ধরণের সমস্যার প্রধান কারণ হলো লোমকূপে জমে থাকা ময়লা।সমস্যা গুলোর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ হলো ফুসকুড়ি, চুলকানিএবং বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ।এই সকল সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে মধু। আপনি যদি নিয়মিত মধু খান এবং নারিকেল তেলের সাথে মধু মিশিয়ে হালকা করে শরীরে মাখলে লোমকূপে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

শেষ কথাঃ মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রতিদিন সঠিক নিয়মে মধু খেলে আমরা খুব সজেই এর উপকারিতা পেতে পারি। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। যদি এই বিষয়ে আপানার কোন কিছু বলার বা জানার থাকে , তবে আমাদের কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

মধু দিয়ে রূপচর্চা ও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও সময়, নিয়ে লিখা এই আর্টিকেলটি আপনার ভাল লাগলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করুন। স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক অন্যান্য বিষয়ে আরও জানতে আমাদের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url