আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,খালি পেটে খেলে কি হয় এই সকল বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি। আশা করি আমাদের পোস্টটি পড়লে আপনি আনারসের উপকারিতা অপকারিতা ও খালি পেটে খেলে কি হয় তা জানতে পারবেন।আসুন আমরা জেনে নেই আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খালি পেটে আনারস খেলে কি হয় এবং পিরিয়ডের ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখে সে সময় বিষয় সম্পর্কে জানি।
আপনি যদি আপনারমূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের সাথে শেস পর্যন্ত থাকেন তাহলে আসা করি আপনি আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,খালি পেটে খেলে কি হয় এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভূমিকা
আনারস গ্রীষ্ম কালীন একপ্রকার গুচ্ছ ফল। ইংরেজিতে একে Pineapple বলা হয়। আনারসের বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus । আনারস তৃপ্তিকর সুস্বাদু রসারো ফল। আনারসের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০গ্রাম আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরী শক্তি। আনারসে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ. সি , পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম ,অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সহ অন্যান্য উপাদান ।
ফলে বাত , হার্ট রোগ , বিভিন্ন ক্যান্সার এবং অথেরোস্ক্লেরোসিস থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা,০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম ,ফসফরাস ০.০২ গ্রাম ,ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে। এত সব পুষ্টি উপাদান থাকার পরও মাত্রা অতিরিক্ত খেলে আপনার বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে।
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়
রোগ নিরাময়ে শতাব্দী ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে আনারস। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আনারস মিশানো পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আনারসে আছে এনজাইম ব্রমেলেইন ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যা রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়।ব্রমেলেইন ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট লিভার ও অন্ত্র ভাল রাখে।
সকালে খালি পেটে আনারস খেলে এর ইলেকট্রোলাইট আপনার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। আনরসের পটাসিয়াম আপনার শরীরে শক্তি জোগাবে আবার ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করবে। আনারস খেলে আর্থাইটিসের ব্যাথা কমাই। দাঁত ভাল রাখে । আনারসের বেটা কেরোটিন চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এছাড়াও আনারস বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
আনারস খাওয়ার উপকারিতা
আনারস শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের উপাদানে ভরপুর। আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় আছে। এই আনারস আপনার শরীরের যে উপকার করে। এই উপকারী দিকগুলো তুলেধরার চেষ্টা করলাম।
পুষ্টির অভাব দূর করে আনারস
বিভিন্ন ধনের পুষ্টিতে পরিপূর্ণ একটি ফরের নাম হল আনারস। আনারসে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফসফরাস ,ক্যালসিয়ম ,পটাশিয়ামসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। এই নানা ধরণের উপাদান গুলো আপনার শরীরের নানা ধরনের কাজ করে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে এবং আপনার শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে আনারস
আপনার হজম শক্তি বাড়াতে প্রাকৃতিক মহা ঔষধ হল আনারস। আমাদের হজমের জন্য একাট প্রয়োজনী উপাদন হল এনজাইম। আর আনারসে আছে ব্রোমেলিন নামক একপ্রকার এনজাইম। এই ব্রোমেলিন আপনার হজম জনীত সমস্যা দূর করে আপনার পাকস্থলিকে করে তুলবে শক্তি শালী্ । তাই নিয়মিত পারিমাণ মত আনারস খান।
ভাইরাস জনিত ঠান্ড ও কাশি রোধে আনারস
আনারসের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অতিগুরুত্ব পূর্ণ হল ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আনারসে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই ভিটামিন সি আবার আপনার ভাইরাস জনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধে খুবই উপকারী। আবার জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধে আনারসের জুড়িমেলা ভার। এছাড়াও নাক দিয়ে পানি পড়া ব্রংকাইটি ও গলাব্যথায় এবং ঔষধের বিকল্প হিসাবে আনারসের রস খেতে পারেন।
শরীরের ওজন কমাতে আনারস
আপনি হয়ত এখন হাসছেন , আনারস আবার ওজন কমায় । জি হ্যাঁ আনারস আপনার শরীরের ওজন কমাবে। কারণ আনরসে আছে ফাইবার ও অনেক কম পরিমাণে ফ্যাট। এই ফাইবার ও কম ফ্যাট আপনার শরীরের ওজন কমাবে। তাই ওজন কমাতে সকালে ফল খাবার সময় ও সালাদে আনারস খান। আবার রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আনারস। ফলে শিরা-ধমনির মধ্য দিয়ে আপনার সারা শরীরে সঠিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।।
দাঁত ও মাড়ি গঠনে আনরস
দাঁত আপনার একটি অমূল্য সম্পত । আর এই দাঁত রক্ষা ও সুগঠনের জন্য প্রয়োজন হল ক্যালসিয়ম। আর আনারস হল ক্যালসিয়ামের উৎস । নিয়মিত আনরস খেলে আপনার দাঁত ও মাড়ি সুগঠিত হয়। দাঁত ও মাড়ির যে কোন সমস্যার একটি সহজ সমাধান হল আনারস।
চোখের যত্নে আনারস
যার চোখ নাই তার কিছুই নাই । পৃথিবীটাই অন্ধকার। চোখের আলো কেড়ে নেওয়া এই রোগটির নাম “ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন”। আর এ রোগটি প্রতিরোধ করে বেটা-ক্যারোটিন। আনারসে বেটা ক্যারোটিন প্রচুর পরিমাণ থাকে। প্রতিদিন আনারস খেলে “ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন” রোগটি হবার সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। তাই আপনার চোখকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত আনারস খাই।
হাড়ের গঠনে আনারস
হাড়ের মূল উপাদন হলো ক্যালসিয়াম। আনারসের প্রতি ১০০গ্রামে ক্যালসিয়ম থাকে ১৮ মিলিগ্রাম। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের দেহের হাড় গঠনে আনারস কতটা হায়ক হতে পারা । তাছাড়া আনারসের ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। সাতারাং আমাদের খাদ্য তালিকায় আনরস রাখা খুবই জরুরী।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আনারস
বর্তমান সময়ের একটি আতংকের নাম হল ক্যান্সার। ফি-রেডিকেল মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়া সৃষ্টি করে । ফলে ক্যান্সার , হৃদরোগের মত মারাত্নক রোগ দেখা দেয়। ফি-রেডিকেল প্রতিরোধ করতে পারে পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি। আর আনারসে প্রচুর পরিমাণে পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি আছে । যা ক্যান্সার , হৃদরোগের মত মারাত্নক রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
আনারস খাওয়ার অপকারিতা
সুস্বাদু এই ফলটির অনেক পুষ্টিগুণ বা উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয় আছে । আসুন জেনে নিই আনারসের খতিকর দিকগুলো।
অ্যালার্জীর সংক্রমন
আনারস খাবার পরে অনেকর ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন ঠোঁট ফুলে যাই এবং অনেকের গলার মধ্যে সুরসুরির মত অনুভব হয়। তবে ভয়ের কিছু নাই। আনারসেরএই অ্যালার্জিক সমস্যার সমাধানও আছে। সমাধান হল আনারস খাবার কিছুক্ষণ আগে আনারস কেটে লবণ দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে ধুয়ে ফেলে নিয়ে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।
বাতের ব্যথা হওয়ার ঝুকি
যখন আপনি আনারস খাবেন তখন আনারস আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে এসে অ্যালকোহল এ পরিনত হয়। আর একারণে আপনার শরীরে বাতের ব্যথা হতে পারে। তাই যাদের বাতের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভাল।
রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি
আনারস প্রাকৃতিক চিনিতে ভরপুর। আনারসে রয়েছে চিনির দুইটি উপাদান সুক্রোজ ও ফুক্টোজ যা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষতিকর। তবে এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর কি না তা নির্ভর করে আনারস খাবার উপর। আনারসের মধ্যকার চিনি আনাদের দেহের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত আনারস না খেয়ে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।
কাঁচা আনারস মুখ ও গলার জন্য ক্ষতিকর
কাঁচা আনারসে অতিরিক্ত পনিমাণে এসিডিটি থাকে । এই এসিডিটি আপনার মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। কাচা আনারস খেলে অনেকের পেটে ব্যথা হতে দেখা যায়।
দাঁতের জন্য ক্ষতিকর
আনারস দাঁতের জন্য উপকারী । কিন্তুু সবার জন্য নই। কিছু কিছু মানুষের দাঁতের জন্য আনারস ক্ষতিকর। যাদের দাঁতে কেভিটিস ও জিংজাভেটিভস সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়ােই ভালো।
আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়
বর্তামন সময়ে নারীদের একটি সর্ব পরিচিত সমস্যা হল অনিয়মিত পিরিয়ড। নারীর মাসিক চক্র তার স্বাভাবিক চক্রের আগে বা পরে শুরু হলে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড। অনিয়মিত পিরিয়ড এর প্রধান কারণ হল হরমনাল ভারসম্যহীনতা। আর এই হরমনাল ভারসম্যহীনতা অনেক গুলো কারণের মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ,থাইরয়েড , বয়স ইত্যাদি।
এ ছাড়াও আরও একটা প্রধান কারণ হল দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন। নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ,শারীরিক পরিশ্রম , সঠিক পরিমাণে ঘুমের অভ্যাস পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে সহায়তা করে। অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা সমাধানে যে ,ফল গুলো সাহায্য করে সেগুলো হলো পেঁপে ,আদা,দারুচিনি, হলুদ, বিটরুট, অ্যালোভেরা ও আনারস।
এত সব ফলগুলোর মধ্যে আনারস অনত্যম । যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড তারা নিয়মিত আনারস খেলে দেহে লোহিত রক্ত কোণিকা ও শ্বেত রক্ত কোণিকা বৃদ্ধি পাই। এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ও মাসিকের সময় জরায়ুর আস্তরণের ক্ষরণে সহায়তা করে।তাই অনিয়মিত পিরিয়ড হলে নিয়মিত ,পরিমাণ মত আনরস খেলে উপকার পাবেন। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
শেষ কথাঃআনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,খালি পেটে খেলে কি হয়
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই আছে । সেটা আমরা জানলাম। আনারসের অপকারিতাটা আমরা পেলাম কখন, যখন আমরা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলাম। নিয়ম করে পরিমান মত আনারস খেলে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে উপকৃত হতে পরি। তাই আসুন আমরা মাত্রাতিরিক্ত আনারস না খাই ,পরিমাণ মত নিয়ম মেনে খাই।
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন ,অজানা কোন তথ্য যদি জানতে পারেন বা ভাল লাগে তাহালে আপনি আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন এবং আপনার ভাল লাগা খারাপ লাগা মন্তব্য করুন ।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url