নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
বর্তমান সময় আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি। এই ডিজিটাল যুগে আপনার সন্তানের প্রথম সনদ হল জন্ম সনদ। যেটা আপনার শিশু জন্ম হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে করা বাধ্যতামূলক। তবে যদি বিভিন্ন সমস্যার কারণে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সনদ সংগ্রহ করা না হয় তাহলে যে কোন সময়ে যত দ্রুত সম্ভব আপনি আপনার শিশু বা ব্যক্তির জন্ম সনদ করে ফেলুন। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন এর জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আপনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন।
আপনি যদি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনি ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করার চেয়ে দ্রুত জন্ম সনদ হাতে পাবেন। আপনি জন্ম নিবন্ধন এর জন্য অনলাইনে আবেদন করলে অতি কম খরচে আপনি আপনার শিশুর জন্ম নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে পারবেন কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয় এবং অনেকটা সময় নেই।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন
আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে বিডি ওয়াইফ এই লিংকে ভিজিট করতে হবে। এবার নিবন্ধনের ঠিকানা সিলেক্ট করে আপনার বা আপনার সন্তানের এক কথায় নিবন্ধনকারীর ব্যক্তিগত পরিচিতি ঠিকানা এবং পিতা-মাতার নাম ও সকল তথ্য পূরণ করুন করতে হবে। এরপর আবেদনকারী ব্যক্তির প্রত্যয় দিয়ে ডকুমেন্টস আপলোড করে আবেদনটি আবারও রিভিউ করতে হবে। প্রতিটি ভেরিফাই করে আবেদনটি সাবমিট করতে হবে।
আবেদনটি যদি সঠিকভাবে সাবমিট করা হয় তাহলে আবেদনটির কপি প্রিন্ট আউট করে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় জমা দিয়ে ফ্রি পেমেন্ট করতে হবে। আপনার সকল কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি আগামী সাত দিনের মধ্যে আপনি আপনার নতুন জন্ম সনদ হাতে পাবেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
জন্মর সময় এর উপর ভিত্তি করে বা বয়সের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিভিন্নতা রয়েছে। বয়স ভেদে তিন ভাবে জন্ম নিবন্ধন করা যায় এবং সে ক্ষেত্রে কাগজও কমবেশির দরকার হয়।
শিশুর বয়স শূন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হলে
টিকা বা ইপিআই কার্ড বা হাসপাতালের প্রত্যয়ন পত্র।
হালসনের পরিশোধিত ট্যাক্সের রশিদ।
আবেদনকারের পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম সনদের ফটোকপি।
অভিভাবকের সচল মোবাইল নাম্বার।
শিশুর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর হলে
ইপিআই বা টিকার কার্ড বা হাসপাতালের প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র।
বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধের কাগজ।
আবেদনকারীর পিতা ও মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।
আবেদনকারী কোন স্কুলে ভর্তি হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়ন পত্র দিতে হবে।
অভিভাবকের সচল মোবাইল নাম্বার।
আবেদনকারী
আবেদনকারীর বয়স পাঁচ বছরের বেশি হলে
বয়সের প্রমাণের জন্য রেজিস্টার্ড সরকারি এমবিবিএস ডাক্তারের সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র।
জে এস সি বা এসএসসি বা সমবনের পরীক্ষার সার্টিফিকেট যদি থাকে।
আবেদনকারীর পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি।
ঠিকানা প্রমাণের জন্য বাড়ির দলিল বা ট্যাক্স পরিষদের রশিদ।।
আবেদনকারীর বা অভিভাবকের সচল মোবাইল নাম্বার
উপরের লিখিত কাগজ ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভা থেকে প্রয়োজনমতো আরো কিছু কাগজপত্র হয়তোবা চাইতে পারে। জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করার পূর্বে আপনি অবশ্যই এ সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করবেন।
অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম গুলো নিম্নরূপ।
প্রথমে এই লিংকে ভিজিট করুন।
নিবন্ধনের ঠিকানা সিলেট করুন।
নিবন্ধনকারী ব্যক্তির ঠিকানা পরিচিতি পিতা-মাতার সকল তথ্য দিন।
আবেদনকারীর সকল তথ্য দিন।
প্রয়োজনে কাগজপত্র আপলোড করুন।
ওটিপি ভেরিফাই হলে আবেদনটি সাবমিট করুন।
আপনি যদি এই সকল ধাপ সম্পন্ন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদ ন করতে চান তাহলে আপনাকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
ধাপ এক: জন্ম নিবন্ধন এর জন্য ওয়েবসাইট ভিজিট
নতুনভাবে জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের জন্য আপনার প্রধান কাজ হবে বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করা। এবার আপনাকে রেজিস্টার জেনারেল এর কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত সাইডের জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফর্মটি ওপেন করতে হবে।
ধাপ 2 :জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঠিকানা নির্বাচন করা।
দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য একটি ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে এবং এই ঠিকানাটি আপনার জন্ম সনদের তালিকা ভক্তু হবে। এখানে আপনি চাইলে আপনার জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা বা বিদেশি বাংলাদেশে দূতাবাসের ঠিকানা ।এই তিনটি ঠিকানার মধ্যে থেকে আপনাকে যেকোনো একটি সিলেক্ট করতে পারবেন।
ধাপ ৩: জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির পরিচয় বাচক তথ্য দিন প্রদান করুন।
আবেদনকারী ব্যক্তির নামে প্রথম ও শেষ অংশ বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখতে হবে।
অবশ্যই আবেদনকারীর সঠিক জন্ম তারিখ দিতে হবে।
আবেদনকারী ব্যক্তি বা শিশু পিতা-মাতার কততম সন্তান সেটা উল্লেখ করতে হবে।
আবেদনকারী ব্যক্তির লিঙ্গ নির্ধারণ করে উপরে উল্লেখিত তথ্য পূরণ করত।
ধাপ ৪: জন্মস্থানের ঠিকানা প্রদান
এখানে আপনি জন্ম নিবন্ধনের জন্য যেই ঠিকানা সিলেটি করেছেন সেই ঠিকানার তথ্যগুলো প্রদান করতে হবে ।যেহেতু আবেদনের পূর্বেই বা শুরুতেই জন্মস্থানের ঠিকানা নির্বাচন করা হয়েছে। তাই আপনাকে আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা দিতে হবে।
এখানে আপনাকে দেশ বিভাগ জেলা এভাবে পর্যায়ক্রমে সিলেট করে পরের আসনে যেতে হবে। এখানে আপনাকে অবশ্যই ঠিকাদার ঘরগুলোতে যেখানে লাল বা স্টার চিহ্ন আছে সেটা পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৫: আবেদনকারী পিতা মাতার তথ্য প্রদান
এখানে আপনি যদি আবেদনকারী হন তবে আপনাকে আপনার পিতা মাতার তথ্যগুলো বা আইনত অভিভাবকের তথ্য প্রদান করতে। এখানে অবশ্যই আপনাকে পিতা ও মাতার একই রকমের তথ্যগুলো প্রদান করতে হবে। আপনাকে আপনার পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার প্রদান করতে হবে ।তারপর আপনার পিতা ও মাতার জন্ম তারিখ সঠিকভাবে দিতে হবে। আপনার পিতা ও মাতার নাম বাংলা ও ইংরেজিতে বড় হাতের অক্ষ লিখতে হবে। সবশেষে আপনার পিতা-মাতা জাতীয়তা নির্বাচন করতে হবে। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় পিতা মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে অটোমেটিক্যালি পূরণ হয়ে যাবে। উল্লেখ্য আগে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন ছিল বা বাধ্যতামূলক ছিল কিন্তু বর্তমানে পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার না থাকলেও সমস্যা নাই।
ধাপ ৭: আবেদনকারীর সকল তথ্য প্রদান
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় আবেদনকারী অভিভাবক হিসেবে আবেদনকারীর পিতা বা মাতা বা দাদা-দাদী তথ্য প্রদান করে থাকেন। এখন কথা হল আপনি যদি নিজেই আপনার জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে নিজ অপশন সিলেক্ট করতে হবে এবং আপনার অভিভাবক যদি আবেদন করে থাকে তাহলে পিতা-মাতার দাদা-দাদী বা আইনগত অভিভাবক ইত্যাদি নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি সচল মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন হবে। এ সকল মোবাইল নাম্বারে আপনার সম্পর্কিত সকল তথ্য এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ সকল তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া হয়ে গেলে পরবর্তী বাটনে চাপ দিয়ে আপনি আবেদনটি সম্পূর্ণ করুন।
ধাপ ৮: আবেদনকারী প্রমাণপত্র বা ডকুমেন্ট সাবমিট।
এখানে আবেদনকারীর প্রধান কৃত তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে এ কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে ইপিআই বা টিকার কার্ড, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র, ইত্যাদি।
আরো কাগজপত্র আপলোড করার জন্য আপনাকে সংযোজন বাটনে ক্লিক করে আপনার কম্পিউটারে থেকে ডকুমেন্ট নির্বাচন করুন তারপর ফাইল টাইপ নির্বাচন করে স্টার্ট বাটনে চাপ দিয়ে ছবি আপলোড করুন। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনার ফাইল সাইজ কে যেন ১০০ kb এর চেয়ে ছোট হয়।
ধাপ নয়: আবেদনের তথ্য পুনরায় যাচাই
এখানে আপনি দেখতে পাবেন আপনার পূরণ কৃত সকল তথ্য । যেটা রিভিউ আকারে আমরা সামনে থাকবে এবং সেখান থেকে আপনি আপনার প্রদত্ত সকল তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন। কোন কিছু ভুল থাকলে আপনি সেটা পুনরায় সংশোধন করে নিতে পারবেন।
ধাপ দশ: আপনার মোবাইলে প্রদত্ত ওটিপি ভেরিফাই ও আবেদন সাবমিট।
আপনি ভালো করে লক্ষ্য করলে আবেদন রিভিউ পেজের নিচের দিকে ওটিপি যাচাই নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। এখানে আপনাকে প্রথমে আবেদনকারীর ইমেইল নাম্বারটি লিখতে হবে। তারপর আবেদনকারীর একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখে ওটিপি পাঠান বাটনে ক্লিক করতে হবে। ওটিপি পাঠান বাটনে ক্লিক করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার দেওয়া মোবাইলে একটি মেসেজের মাধ্যমে ছয় সংখ্যার একটি কোড পাঠানো হবে সেই সংখ্যাটি পাশের ঘরে বসে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১১: নিবন্ধনের আবেদন প্রিন্ট
আপনার নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সকল ধাপ শেষে আপনি একটি কনফার্মেশন পেজ দেখতে পাবেন। এই কনফরমেশন পেজে আপনার আবেদনের নম্বর বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি নম্বর দেখতে পাবেন। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে আপনি আরেকটি অপশন দেখতে পাবেন সেটা হচ্ছে ফি প্রদান এ ফ্রি প্রধান বাটনে ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন ফি প্রদান করুন।
এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে আবেদনের পত্রটি প্রিন্ট আউট অপশন থেকে আপনার আবেদনটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। আপনার প্রিন্ট কৃত এই কপিটি আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে জমা দিতে হবে।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url