প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর লক্ষণ ও জটিলতা-গর্ভবতীদের অন্যান্য রোগ
গর্ভাবস্থায় সহবাস কি নিরাপদআসসালামু আলাইকুম বন্ধুগণ। আপনার হয়তো প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর
লক্ষণ ও জটিলতা সম্পর্কে করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান নাই। একজন গর্ভবতী মায়ের
প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর লক্ষণ ও জটিলতা সম্পর্কে জানা খুবই
জরুরী।
আপনি যদি আপনার মূল্যবান সময়ের কিছুটা সময় ব্যয় করে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত
থাকেন এবং মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে নিন তাহলে আশা করি আপনি
প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর লক্ষণ ও জটিলতা সহগর্ভবতীদের অন্যান্য
রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে ধারণা পাবেন এবং আপনি আপনার কাছের মানুষকে এ বিষয়ে
সচেতন করতে পারবেন।
প্রি-একলাম্পশিয়া
গর্ভাবস্থায় যে কোন সময় গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ পায়ে পানি জমা দিদিমা ও
প্রসবের এলবুমি এর তিনটি যেকোনো দুইটি উপস্থিত থাকলে তাকে প্রি-একলাম্পশিয়া বলে।
পূর্ব লক্ষণ
- রোগের ইতিহাস (পূর্ববতী গর্ভের ইতিহাস) পা ফোলা
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা
- হঠাৎ করে বেশি ওজন বাড়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- পেটের উপরের ভাগে ব্যথা
- পরীক্ষা করে দেখা যাবে উচ্চ রক্তচাপ ১৪০ বাই ৯০ মিমি মার্কারি এর বেশি প্রসাবে অ্যালবামের পা ফলা বা ইজমা এই তিনটি যেকোনো দুইটি থাকলে তাকে প্রি-একলাম্পশিয়া বলে।
প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষণ
- পায়ে পানি নামার অন্যান্য কারণ
- অতিরিক্ত রক্তস্বল্পতা
- সব সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা
- কিডনির দীর্ঘকালীন রোগ
- প্রোটিনের অভাব
- একের অধিক সন্তান পেটে আসা বা হাইড্রো মনিয়া স
উচ্চ রক্তচাপ
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৯০ মিমি মার্কারি এর অধিক হলে তাকে উচ্চ
রক্তচাপ বলে।
প্রসবের এলবুমিন
প্রসঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে সাথে যদি উচ্চ রক্তচাপ বা পায়ে পানি থাকে তবে
প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষ্য হিসেবে ধরা হবে।
স্বাভাবিক পরিণতি ও জটিলতা
প্রি-একলাম্পশিয়া সাধারণত গর্ভের অবস্থা খারাপের দিকে নিয়ে যায় মাথাব্যথা শরীর
ফুলে যাওয়া চোখে ঝাপসা দেখা বৃদ্ধি পেতে পারে। খিচুড়ি দেখা দিলে তাকে
একলাম্পশিয়া বলা হয় এবং এতে মা ও শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষণ
একলাম্পশিয়া
একলাম্পশিয়া একটু মারাত্মক রোগ। গর্ভ অবস্থায় বা প্রসবের সময় বা প্রসবের
পূর্ববর্তী মায়ের পিছনে দেখা দিলে যে অবস্থা একলাম্পশিয়া বলে। তার সাথে সাধারণত
উচ্চ রক্তচাপ পা ফোলা প্রসঙ্গে এলবুমিন পাওয়া যায়।
কেয়া সাধারণত গর্ভের সাত মাস পরে হয়। কখনো কখনো প্রসবের আগে প্রসবের সময় এমনকি
প্রসবের পরেও হতে পারে। অল্প বয়সে গর্ভধারণ করলে এবং প্রথমবার প্রসবের ক্ষেত্রে
এই রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একলাম্পশিয়া পূর্ব লক্ষণ সমূহ
- মাথা ধরা এবং মাথা ঘোরা নো
- বমি হওয়া এবং পেট ব্যথা
- চোখের দৃষ্টি ক্ষিন এবং সরষে ফুল লেখা
- একলাম্পশিয়ার তিনটি লক্ষণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে অ্যালবুমিন বা কি দিবা অথবা উভয়ই থাকতে পারে।
একলাম্পশিয়ার লক্ষণ
একাধিক সন্তানের মায়ের পূর্ববর্তী যেকোনো গর্ভকালে একলাম্পশিয়ার ইতিহাস থাকতে
পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হল
- রোগীর বেশি ঘুম,
- মাথাব্যথা ,চোখের আলোর ঝলকানি বা অন্ধকার দেখা ।
- বমি বমি ভাব।
- পেটের উপরিভাগে ব্যথা।
- মারাত্মক খিচুনি স্পর্শের ও শব্দে বেড়ে যায়।
- অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস ও চোখ ঘোরানো
- বাঁধ কপাটি অজ্ঞান হওয়া
- সংজ্ঞা হীন
চিৎকার এবং চোখের পাতায় খিচুনি সহকারে ফিট আরম্ভ হতে। শক্তভাবে হাত পা
বেড়ে রোগী বিছানায় গড়াগড়ি দেয়। তারপিট বেঁকে যায় এবং শক্ত হয়। শ্বাস বন্ধ
হয়ে যায় এবং রোগীর চেহারায় নীল বর্ণ হয়ে পড়ে যেহবার কেটে যেতে পারে।
সারা শরীরে খিচুনী আরম্ভ হতে পারে। মুখ হতে ফেনা উঠে। শাঁস ফিরে আসে এবং শরীর রং
ফিরে আসে। তারপর রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
পরীক্ষা করে দেখা যাবে
- হাত মুখ পা ফোলা দেখা যেতে পারে।
- দাঁতকপাটি ও অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
- রক্তচাপ ১৪০ বাই ৯০ মিমি মার্কারি বেশি পাওয়া যাবে
- প্রস্রাব পরীক্ষায় এলবুমিন পাওয়া যাবে
- প্রস্রারের পরিমাণ অল্প থাকতে পারে।
- মা এবং শিশুর সংকটা পূর্ণ অবস্থা পাওয়া যেতে পারে।
একলাম্পশিয়ায় হলে করণীয়
- মা কাত করে শুয়ে রাখতে হবে
- মাকে একটি নীরব অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে।
- শ্বাস পথ পরিষ্কার রাখতে হবে।
- আলগা দাঁত থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিপদজনক দ্রব্যাদি সরিয়ে ফলতে হবে।
- জিহ্বায় কামড় না পড়ার জন্য দুই হাতের ফাঁকে চামচে কাপড় জড়িয়ে ঢুকিয়ে রাখতে হবে।
- সেবা যত্নের জন্য অবশ্য একজন সহকারীকে সব সময় মায়ের পাশে রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে হলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বসের ব্যবস্থা করতে হবে।
একলাম্পশিয়ার জটিলতা
- মৃত সন্তান প্রসব অথবা মায়ের প্রশ্নপত্র প্রসত্তোর মৃত্যু।
- অপরিপক্ক শিশু জন্মগ্রহণ।
- প্রসব পূর্বে রক্তপাত।
- নিউমোনিয়া
- কিডনিলিওর কার্যকর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
- লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
- Heart Failure হৃদযন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা লোপ পাওয়া
একলাম্পশিয়ার কারণে মৃত্যু প্রতিরোধ
- একলাম্পশিয়া প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিটি গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন যত্ন বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে গর্ভের সাত মাস পর এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে।
- গর্ভবতী মায়ের প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষণ যেমন পা ফোলা উচ্চ রক্তচাপ প্রসবের এলবুমিন দেখা দিলে তখন থেকেই সঠিক চিকিৎসার জন্য মাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে।
- মাকে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
- মাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের অন্যান্য রোগ সমূহ
অবস্থায় গর্বের ছাড়াও অন্যান্য রোগ যেমন সর্দি কাশি পাতলা পায়খানা চর্মরোগ আপনার মনে হতে পারে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন হেপাটাইটিস বহুমূত্র ম্যালেরিয়া যক্ষা উচ্চমাত্রার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই এসবের রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে।হেপাটাইটিস
- এই অসুখে চোখ এবং হাতের তালু হলুদ হয়।
- প্রসব গা হলুদ রঙের হয়।
- হালকা রঙের পায়খানা।
- বমি ভাব বা বমি হওয়া
- মাঝে মাঝে জ্বরের লক্ষণ থাকতে পারে।
- পেটের ডান পাশ উপরে ব্যাথা হতে পারে।
প্রতিকার
- গর্ভবতী মাকে বিশ্রাম নিতে বলতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- যেটা খেতে ভালো লাগে সেটা খেতে দিতে হবে এবং হালকা মসলাযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে।
- ঔষধ খাবেনা।
- প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
দ্রষ্টব্য: গর্ভ অবস্থায় যাদের হেপাটাইটিস হয় সাধারণত তাদের সন্তান
তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে থাকে এবং বুকের দুধ সে খেতে পারেনা। সেক্ষেত্রে
বুকের দুধের চেপে বের করে পরিষ্কার চামচ দিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে।
ম্যালেরিয়া
- শীত অনুভূতি বা কাঁপলেসহ জোর আসে এবং ছেড়ে যাই। শরীরের তাপমাত্রা 103 ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে।
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- খুব মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে।
- অনুভব করা যায় এমন যকৃত।
- রক্ত পরীক্ষা করলে রক্তে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট পাওয়া যায়।
প্রতিকার
- মাথায় ঠান্ডা পানি দিতে হবে।
- জ্বর থাকলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছতে হবে।
- ভালো করে সেবা যত্ন নিতে হবে।
- প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম খাওয়াতে হবে।
- ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
যক্ষা
- অনেকদিন ধরে খুসখুশে কাশি ও জ্বর থাকে।
- কাশির সাথে রক্ত থাকতে হবে।
- ক্রমাগত ওজন কমতে থাকবে।
- এন্টিবায়োটিকেও কোন উন্নতি হয় না।
- রোজ রাতে জ্বর থাকতে পারে।
- পরীক্ষা করলে কবে যক্ষার জীবাণু পাওয়া যাবে এবং সুবিধা থাকলে এক্সরেও করতে হবে।
প্রতিকার
- প্রয়োজন হলে প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি দিতে হবে
- রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের সারাক্ষণ শরণাপন্ন হতে হবে এবং নির্দেশনাবলী মেনে চলতে হবে।
- রোগীর ছোট শিশুদের বি সি জি টিকা দিতে হবে।
যেকোনো উচ্চ মাত্রার জ্বর
- শরীরের তাপমাত্রায় ১০২° ফা: এর বেশি এবং প্রলাপ বকতে পারে।
- ইনফেকশনের লক্ষণ বা চিহ্ন দেখা যেতে পারে।
- প্রসব ও বুক পরীক্ষা করতে হবে।
প্রতিকার
- জ্বরের কারণ নির্ণয়ের করে চিকিৎসা করুন।
- প্রয়োজন মত ৫০০ এমজি প্যারাসিটামল বডি খেতে দিন। মাকে প্রচুর পানিও খেতে হবে।
- মাকে জোর থাকাকালীন গোসল করতে বলুন।
- প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
শেষ পাতা: প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর লক্ষণ ও জটিলতা-গর্ভবতীদের অন্যান্য রোগ
আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়েন। তাহলে আশা
করি আপনি প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর লক্ষণ ও জটিলতা
সম্পর্কে বিস্তার ধারণা পেয়েছেন। সে সাথে শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা
সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে
মন্তব্য করুন এবং আপনার বন্ধুকে প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া কি, এর
লক্ষণ ও জটিলতা সম্পর্কে জানার জন্য শেয়ার করুন।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url