বিদেশি ফুলের ছবি
বিদেশি ফুলের ছবি নিয়ে আলোচনা করলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানা বৈচিত্র্যময় ফুলের সৌন্দর্য আর বৈশিষ্ট্য আমাদের মন কেড়ে নেয়। বিদেশি ফুল বলতে আমরা সাধারণত সেইসব ফুলকে বুঝি যেগুলি আমাদের দেশ থেকে ভিন্ন আবহাওয়া এবং ভিন্ন অঞ্চলে জন্মে। এই ফুলগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই তাদের গন্ধ ও রংও বেশ আলাদা এবং মুগ্ধকর।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই স্থানীয় ফুলের প্রজাতি ভিন্ন হওয়ার কারণে বিদেশি ফুলগুলির রং, আকার, গঠন ও সুগন্ধ আলাদা হয়। যেমন জাপানের চেরি ব্লসম, নেদারল্যান্ডের টিউলিপ, আফ্রিকার প্রোটিয়া বা দক্ষিণ আমেরিকার অর্কিডের মতো ফুলগুলি তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে। বিদেশি ফুলের ছবি দেখলে প্রকৃতির অদ্ভুত সৃষ্টির একটি ভিন্ন রূপ ধরা পড়ে, যা মানুষের মনে আনন্দ ও প্রশান্তি আনে।
ফুলের এই বৈচিত্র্য শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, এটি আমাদের পরিবেশগত সচেতনতা বাড়াতেও সহায়ক। বিশেষত ফুলগুলির ছবি দেখে সহজেই আমরা প্রকৃতির বিভিন্নতা ও উদ্ভিদের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে পারি।
বিদেশি ফুলের ছবি
রানুকিউলাস ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
রানুকিউলাস (Ranunculus) ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Ranunculus asiaticus। রানুকিউলাস ফুল তাদের নানান রঙ ও পাপড়ির বাহার জন্য বিখ্যাত, এবং এরা সাধারণত বসন্তে ফোটে। কিছু অজানা তথ্য হলো:
রানুকিউলাস নামের উৎপত্তি: ল্যাটিন শব্দ "rana" থেকে এসেছে, যার অর্থ ব্যাঙ। এই নামকরণ এর কারণ হলো রানুকিউলাস গাছগুলো পানির কাছাকাছি, যেমন পুকুর বা জলাশয়ের পাশে, ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
বিষাক্ততা: রানুকিউলাসের বেশিরভাগ প্রজাতিই সামান্য বিষাক্ত। এদের পাতা ও কাণ্ডে রানুনকুলিন নামে এক যৌগ থাকে যা ভেঙে গিয়ে প্রোটোন্যানিম নামে বিষ তৈরি করে। এটি সাধারণত গবাদিপশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
রং ও বৈচিত্র্য: রানুকিউলাস বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে পাওয়া যায়, যেমন লাল, গোলাপি, কমলা, হলুদ, ও সাদা। এদের রঙ এবং পাপড়ির স্তর ফুলটিকে খুবই আকর্ষণীয় করে তোলে।
প্রজনন ক্ষমতা: রানুকিউলাস খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের বীজ এবং কন্দ দুইভাবেই বৃদ্ধি সম্ভব।
শীতকালীন সহ্যক্ষমতা: রানুকিউলাস সাধারণত শীতল আবহাওয়ায় ভালো করে। কিছু প্রজাতি শীতের কঠিন ঠাণ্ডাও সহ্য করতে সক্ষম।
ফুলের সৌন্দর্যের জন্য রানুকিউলাস বিভিন্ন দেশে বাগান ও ফুলের তোড়ায় ব্যবহার হয়, এবং এগুলি ফ্লোরাল ডেকোরেশনেও অনেক জনপ্রিয়।
ওরিয়েন্টাল পপি ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
ওরিয়েন্টাল পপি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Papaver orientale। এটি সাধারণত উজ্জ্বল রঙের ও বড় আকারের জন্য জনপ্রিয়, এবং এরা সাধারণত বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ফোটে। Papaver orientale প্রধানত মধ্য এশিয়ার অঞ্চল যেমন তুরস্ক, ইরান, ও ককেশাস পর্বতমালা থেকে উদ্ভূত। কিছু অজানা তথ্য হলো:
দীর্ঘস্থায়ী বার্ষিকতা: ওরিয়েন্টাল পপি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এরা একবার রোপণের পর বছরে বছরে নিজ থেকে পুনরায় ফুটে ওঠে এবং সাধারণত মে-জুন মাসে ফুল দেয়।
বিভিন্ন রঙের বাহার: ওরিয়েন্টাল পপি বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে পাওয়া যায় যেমন লাল, কমলা, গোলাপি, ও সাদা। এদের ফুলের পাপড়িগুলো কাগজের মতো পাতলা হয় এবং পাপড়ির কেন্দ্রে কালো দাগ দেখা যায়, যা ফুলটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
বিষাক্ত উপাদান: ওরিয়েন্টাল পপির পুরো গাছটিই কিছুটা বিষাক্ত। এর সাদা দুধের মতো আঠালো তরলটি খেলে বা শরীরে লাগালে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
শীতকালে শীতঘুম: এই পপি গাছ শীতকালে মাটির নিচে থাকা কন্দ ও শিকড়ের মাধ্যমে বেঁচে থাকে, আর বসন্তকালে নতুন পাতা ও ফুল নিয়ে পুনরায় বেড়ে ওঠে।
ঔষধি গুণ: অন্যান্য পপি ফুলের মতো এর কিছু প্রজাতিতে ওষুধি গুণ রয়েছে। তবে এই বিশেষ প্রজাতি সরাসরি ওষুধে ব্যবহৃত না হলেও এর সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতিগুলি মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
বাগানে জনপ্রিয়তা: গ্রীষ্মকালের বাগানের জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়। বাগানের রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে ওরিয়েন্টাল পপি খুব ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং প্রচুর ফুল ফোটায়।
ওরিয়েন্টাল পপির সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির জন্য এটি ফুলের তোড়া এবং বাগান সাজানোর জন্য অনেক প্রিয়।
গ্লাডিওলাস ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
গ্লাডিওলাস ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Gladiolus communis। এটি মূলত ইরিডেসি পরিবারভুক্ত একটি সুগন্ধি ফুল, যা তার উজ্জ্বল রঙ এবং দীর্ঘ কাণ্ডের কারণে জনপ্রিয়। গ্রীক ভাষায় Gladius শব্দের অর্থ 'তলোয়ার,' যার থেকে এর নামকরণ হয়েছে, কারণ গ্লাডিওলাসের পাতা দেখতে তলোয়ারের মতো।
গ্লাডিওলাস গাছের উচ্চতা ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং ফুলগুলো সাধারণত গ্রীষ্মকালে ফুটে। এর বিভিন্ন রঙের মধ্যে লাল, গোলাপি, হলুদ, বেগুনি এবং সাদা রঙের ফুল বেশি দেখা যায়। এই ফুলকে শক্তি, স্মৃতিশক্তি এবং ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে বাগান এবং শোভা বর্ধনের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়।
আইরিস (Iris) ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
আইরিস ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Iris germanica, এবং এটি Iridaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই ফুলটি তার অনন্য রঙ ও গঠন এবং বিভিন্ন বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। আইরিস নামটি এসেছে গ্রিক দেবী "Iris" থেকে, যিনি রংধনুর দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন; আইরিস ফুলও রংধনুর মতো বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়।
আইরিস ফুল সাধারণত নীল, বেগুনি, সাদা, হলুদ, ও গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এটি ৮০ সেমি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই ফুলটি সৌন্দর্য, আশা এবং জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এটি প্রায়শই সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাগানের শোভা বাড়ানোর জন্য আইরিস ফুল বেশ জনপ্রিয়।
ওর্কিড (Orchid) ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
ওর্কিড ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Orchidaceae, এবং এটি Orchidaceae পরিবারভুক্ত। এই পরিবারটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের পরিবারগুলির মধ্যে একটি, যেখানে ২৫,০০০ টিরও বেশি প্রজাতির ওর্কিড রয়েছে। ওর্কিডের বৈচিত্র্য এবং আকর্ষণীয় গঠন একে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুলে পরিণত করেছে।
ওর্কিড ফুল বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের হয়ে থাকে, যেমন সাদা, বেগুনি, গোলাপি, হলুদ, এবং নীল। এই ফুলের পাপড়িগুলোর গঠন অসাধারণভাবে জটিল, যা প্রায়ই পাখি বা প্রজাপতির মতো দেখতে লাগে। ওর্কিড ফুল ধৈর্য, শক্তি, এবং প্রেমের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ওর্কিড সৌন্দর্য এবং বিলাসিতার প্রতীক, এবং এটি গৃহসজ্জা ও শোভা বর্ধনের জন্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
কার্নেশন (Carnation) ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
কার্নেশন ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Dianthus caryophyllus। এটি Caryophyllaceae পরিবারভুক্ত এবং বিশ্বের অন্যতম পুরনো চাষকৃত ফুল। গ্রিক ভাষায় Dianthus শব্দের অর্থ "ঈশ্বরের ফুল," যা এর নামকরণে প্রতিফলিত হয়েছে।
কার্নেশন ফুল সাধারণত লাল, গোলাপি, সাদা, হলুদ, ও বেগুনি রঙে পাওয়া যায়। এই ফুলটি দীর্ঘস্থায়ী এবং মিষ্টি সুবাসের জন্য জনপ্রিয়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে কার্নেশন বিভিন্ন অর্থ বহন করে—লাল কার্নেশন প্রেমের প্রতীক, গোলাপি মমতার, এবং সাদা পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এটি বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য, যেমন বিবাহ, জন্মদিন, এবং মাতৃ দিবসে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় এবং ফুলের তোড়া সাজাতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
ক্যালা লিলি (Calla Lily) ফুলের ছবি।বিদেশি ফুলের ছবি।
ক্যালা লিলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Zantedeschia aethiopica, এবং এটি Araceae পরিবারভুক্ত। যদিও নামের মধ্যে "লিলি" রয়েছে, এটি আসলে লিলি পরিবারের অন্তর্গত নয়। ক্যালা লিলি দক্ষিণ আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলের স্থানীয় ফুল, যা তার সৌন্দর্য এবং অনন্য গঠনের জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।ক্যালা লিলি সাধারণত সাদা, তবে এটি হলুদ, গোলাপি, বেগুনি ও কমলা রঙেও পাওয়া যায়। এই ফুলের বাঁকানো, ট্রাম্পেট আকৃতির পাপড়ি এবং উজ্জ্বল হলুদ বা সোনালি কেন্দ্র একে অনন্য সৌন্দর্য প্রদান করে। ক্যালা লিলি বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য এবং পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। বিয়ে এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় এবং বাগানের শোভা বর্ধনের জন্যও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
চেরি ব্লসম ফুলের ছবি।বিদেশি ফুলের ছবি।
চেরি ব্লসম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Prunus serrulata, এবং এটি Rosaceae পরিবারভুক্ত। এটি বিশেষত জাপান, কোরিয়া এবং চীনে খুব জনপ্রিয় একটি ফুল, এবং এই দেশগুলোতে বসন্তের আগমনে চেরি ব্লসমের অসাধারণ সৌন্দর্য উদযাপন করা হয়। জাপানে চেরি ব্লসমকে "সাকুরা" বলা হয়, যা জাপানি সংস্কৃতির গভীর অংশ হিসেবে বিবেচিত।
চেরি ব্লসম ফুল সাধারণত হালকা গোলাপি এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। বসন্তকালে গাছের শাখা-প্রশাখা ফুলে ফুলে ভরে ওঠে, যা একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে। এই ফুল ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যের প্রতীক এবং মানব জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব ও প্রকৃতির নশ্বরতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা হয়। চেরি ব্লসমের প্রতি মানুষের গভীর মুগ্ধতা এবং এর অস্থায়ী সৌন্দর্যের কারণে এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ও শোভাময় বাগান এবং উত্সবে ব্যবহৃত হয়।
ডেইজি (Daisy)বিদেশি ফুলের ছবি।বিদেশি ফুলের ছবি।
ডেইজি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Bellis perennis, এবং এটি Asteraceae পরিবারভুক্ত। ডেইজি তার সাদা পাপড়ি এবং উজ্জ্বল হলুদ কেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত, যা এটিকে সহজেই চেনার মতো করে তোলে। ডেইজি ফুল ইউরোপে স্থানীয় হলেও এখন এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জন্মায় এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাওয়া যায়।
ডেইজি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- "ডেইজি" নামের উৎপত্তি: ইংরেজি শব্দ "ডেইজি" এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ dægeseage থেকে, যার অর্থ "দিনের চোখ"। কারণ ডেইজি ফুল সকালে সূর্যের আলোয় ফোটে এবং সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায়, যা একটি চোখের খোলার এবং বন্ধ হওয়ার মতো দেখায়।
- ঔষধি গুণ: ঐতিহ্যগতভাবে ডেইজি ফুলকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন রোমানরা এটি ক্ষত এবং চোটের আরোগ্য সাধনে ব্যবহার করত। এমনকি এখনো অনেক প্রাকৃতিক ওষুধে এটি ব্যবহৃত হয়।
- প্রতীকী অর্থ: ডেইজি ফুল সরলতা, নিষ্পাপতা এবং নতুন সূচনার প্রতীক। এটি সাধারণত বন্ধুত্ব এবং শুভেচ্ছা জানাতে ব্যবহৃত হয়। কোনো নতুন যাত্রা বা সম্পর্কের সূচনায় ডেইজি ফুল শুভেচ্ছা জানাতে দেয়া হয়।
- খাবারের উপাদান হিসেবে: কিছু ডেইজি প্রজাতির পাতা এবং ফুল সালাদে খাওয়া যায় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
- বিজোড় গঠন: ডেইজি একটি সিংগেল ফুল মনে হলেও এটি আসলে দুটি ভিন্ন ফুলের সমন্বয়ে গঠিত—একটি ডিস্ক ফ্লাওয়ার (হলুদ অংশ) এবং অন্যটি রে ফ্লাওয়ার (সাদা অংশ)।
ডেইজি তার সাদামাটা সৌন্দর্য ও প্রতীকী অর্থের কারণে বাগান এবং ফুলের তোড়ায় খুবই জনপ্রিয়।
লিলি (Lily) ফুলের ছবি।বিদেশি ফুলের ছবি।
লিলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Lilium, এবং এটি Liliaceae পরিবারভুক্ত। লিলি মূলত উত্তর গোলার্ধের ফুল, বিশেষ করে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। লিলি ফুলের বিভিন্ন রং, আকৃতি এবং সুবাসের কারণে এটি খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে বাগান এবং আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে।
লিলি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- প্রাচীন প্রতীকী অর্থ: লিলি ফুল বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ছিল। প্রাচীন মিশরে এটি শুদ্ধতা ও পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। খ্রিস্টান ধর্মে লিলি মেরি কুমারীর বিশুদ্ধতার প্রতীক এবং গ্রিক রোমান সংস্কৃতিতে লিলি দেবী হেরার সাথে সম্পর্কিত ছিল, যিনি বিয়ের দেবী।
- বিভিন্ন রঙের ভিন্ন অর্থ: লিলির বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন প্রতীকী অর্থ বহন করে। সাদা লিলি নিষ্পাপতা এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক, গোলাপি লিলি সমৃদ্ধি ও সমর্থনের, কমলা লিলি উজ্জ্বলতা ও আত্মবিশ্বাসের, এবং হলুদ লিলি আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
- ঔষধি গুণ: প্রাচীন চীনা এবং রোমানরা লিলি ফুলকে বিভিন্ন ঔষধি গুণের জন্য ব্যবহার করত। এর মূল এবং পাপড়ি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ত্বকের জ্বালা ও প্রদাহ কমাতে, ক্ষত নিরাময় করতে এবং কিছুক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তি আনার জন্য ব্যবহৃত হতো।
- বিষাক্ত বৈশিষ্ট্য: কিছু প্রজাতির লিলি যেমন Lilium longiflorum (ইস্টার লিলি) বিড়ালের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত। বিড়াল এটি গ্রহণ করলে কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই ঘরে বিড়াল থাকলে এই ফুলটি রাখা নিরাপদ নয়।
- সুবাস এবং পতঙ্গ আকর্ষণ: লিলি ফুলের সুগন্ধ অনেক প্রজাতির পতঙ্গ যেমন মৌমাছি, প্রজাপতি এবং হুমিংবার্ডকে আকর্ষণ করে, যা পরাগায়নে সহায়ক হয়।
- দীর্ঘস্থায়ী ফুল: লিলি ফুল সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। সঠিক যত্ন এবং পর্যাপ্ত পানি প্রদান করলে এরা আরও কিছুদিন সতেজ থাকে।
লিলি ফুলের সৌন্দর্য, সুবাস এবং প্রতীকী অর্থের কারণে এটি ফুলের তোড়া, বাগান এবং বিশেষ উপলক্ষে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল।
ল্যাভেন্ডার (Lavender) ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
ল্যাভেন্ডার ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Lavandula angustifolia, এবং এটি Lamiaceae পরিবারভুক্ত। এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের স্থানীয় একটি উদ্ভিদ হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে চাষ করা হয়। ল্যাভেন্ডার তার মিষ্টি সুবাস এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত এবং এটি বিভিন্ন সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়।
ল্যাভেন্ডার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- শান্তি ও প্রশান্তির প্রতীক: ল্যাভেন্ডার তার স্বাভাবিক সুগন্ধের জন্য প্রশান্তি এবং আরামদায়কতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এর তেলের গন্ধকে "শান্তির সুবাস" বলা হয় এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- প্রাকৃতিক পোকা প্রতিরোধক: ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ অনেক ধরনের পতঙ্গকে দূরে রাখে, বিশেষ করে মশা, মাছি এবং পিঁপড়াকে। প্রাচীনকাল থেকেই পোশাক এবং বিছানাপত্রের মধ্যে শুকনো ল্যাভেন্ডারের পুষ্প ব্যবহার করা হতো পোকার উপদ্রব রোধ করতে।
- ঔষধি গুণ: ল্যাভেন্ডার প্রাকৃতিক আরোগ্যকারক হিসেবে পরিচিত। এটি আর্থ্রাইটিস, পেশি ব্যথা, এবং মাথাব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। ল্যাভেন্ডার তেল মানসিক শান্তি আনতে সহায়ক এবং এটি অনেকক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
- রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহার: ল্যাভেন্ডার তার মিষ্টি স্বাদ ও সুবাসের কারণে রন্ধনশিল্পে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত ডেজার্ট, সালাদ, চা এবং কিছু মিষ্টান্নে ল্যাভেন্ডার ফুলের পাপড়ি ব্যবহৃত হয়, যা স্বাদে মৃদু ফুলের মতো স্বাদ যুক্ত করে।
- প্রাচীন কালে ল্যাভেন্ডারের ব্যবহার: প্রাচীন মিশরে মমি সংরক্ষণে ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরা ল্যাভেন্ডারকে তার সুগন্ধ এবং জীবাণু রোধকারী বৈশিষ্ট্যের কারণে গোসলের সময় ব্যবহার করত।
- গবেষণায় প্রমাণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা: গবেষণায় দেখা গেছে যে ল্যাভেন্ডার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। এর সুগন্ধ অ্যাংজাইটি, অবসাদ এবং মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করারও সহায়ক।
ল্যাভেন্ডার তার অনন্য সুগন্ধ, রঙ, এবং ঔষধি গুণাবলির জন্য বহুল ব্যবহৃত এবং বাগান, গৃহসজ্জা ও স্বাস্থ্য পণ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।
টিউলিপ (Tulip) ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
টিউলিপ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Tulipa gesneriana, এবং এটি Liliaceae পরিবারভুক্ত। টিউলিপ ফুল মূলত মধ্য এশিয়ার স্থানীয়, তবে এটি ইউরোপ বিশেষত নেদারল্যান্ডসে খুবই জনপ্রিয়। টিউলিপ তার সরল সৌন্দর্য, উজ্জ্বল রঙ এবং বিভিন্ন আকৃতির জন্য বিখ্যাত।
টিউলিপ সম্পর্কে কিছু তথ্য হলো:
- টিউলিপ বাণিজ্য এবং টিউলিপমেনিয়া: ১৭শ শতকের শুরুতে নেদারল্যান্ডসে "টিউলিপমেনিয়া" নামে একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে টিউলিপ ফুলের চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে এটি একটি আর্থিক বুদবুদের সৃষ্টি করেছিল। একটি টিউলিপের দাম বাড়তে বাড়তে মানুষের সম্পত্তির সমান হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।
- রঙের বিভিন্নতা: টিউলিপ বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন লাল, গোলাপি, হলুদ, বেগুনি এবং সাদা। কিছু টিউলিপ দ্বিরঙা বা প্যাচওয়ার্ক ডিজাইনের হয়, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রতিটি রঙের আলাদা আলাদা প্রতীকী অর্থ রয়েছে—লাল টিউলিপ প্রেমের প্রতীক, সাদা ক্ষমার প্রতীক, এবং হলুদ হাসি ও আনন্দের প্রতীক।
- টিউলিপের বংশবিস্তার: টিউলিপ বাল্বের মাধ্যমে জন্মায় এবং প্রতি বছর বসন্তকালে ফুল ফোটে। একটি টিউলিপ বাল্ব থেকে প্রতি মৌসুমে একটি করে ফুল ফোটে, তবে সঠিক যত্ন নিলে এটি পরবর্তী বছরেও ফুল দেয়।
- ঔষধি ও পুষ্টিগুণ: টিউলিপ ফুল কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাপড়ি ত্বকের জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করে। দুর্ভিক্ষের সময়ে, টিউলিপের পাপড়ি এবং বাল্ব খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, যদিও এটির স্বাদ তেমন ভালো নয়।
- টিউলিপের প্রতীকী অর্থ: বিভিন্ন সংস্কৃতিতে টিউলিপ নবজাগরণ, প্রেম এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সাধারণত নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, বিশেষত বসন্ত ঋতুর আগমনে টিউলিপ ফুল ফোটে।
- পরিবেশ বান্ধব: টিউলিপ গাছের যত্ন নিতে খুব কম কীটনাশকের প্রয়োজন হয় এবং এটি পরিবেশ বান্ধব বলে বিবেচিত।
বাগান এবং শোভাময় ফুলের তোড়ায় টিউলিপ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এটি নেদারল্যান্ডসের জাতীয় প্রতীক হিসেবেও সম্মানিত।
গোলাপ ফুলের ছবি।বিদেশি ফুলের ছবি।
গোলাপ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Rosa, এবং এটি Rosaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। গোলাপ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রঙ এবং প্রজাতিতে পাওয়া যায়। এটি সৌন্দর্য, প্রেম এবং আবেগের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
গোলাপ ফুল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- বহু প্রজাতির অস্তিত্ব: গোলাপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং হাজারেরও বেশি বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রজাতি দেশের স্থানীয়, আবার কিছু বিদেশি। গোলাপের বিভিন্ন রঙ যেমন লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ, এবং কমলা রয়েছে।
- গোলাপের ইতিহাস: গোলাপ ফুলের ইতিহাস কয়েক হাজার বছর পুরানো। প্রাচীনকাল থেকেই এটি কবিতা, শিল্প এবং সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে, প্রাচীন রোমান এবং গ্রিক সভ্যতার সময়ে গোলাপকে প্রেমের ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হত।
- রঙের মানে: গোলাপ ফুলের বিভিন্ন রঙের আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। লাল গোলাপ প্রেম এবং রোমাঞ্চের প্রতীক, সাদা গোলাপ বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার, হলুদ গোলাপ বন্ধুত্ব ও আনন্দের, এবং গোলাপি গোলাপ কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
- গোলাপের গন্ধ: গোলাপের সুগন্ধ অনেকেই পছন্দ করেন। গোলাপের তেল (রোজ অয়েল) বিভিন্ন সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বককে সতেজ রাখতে, উদ্বেগ কমাতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতে সহায়ক।
- ঔষধি গুণ: গোলাপের পাপড়ি এবং গোলাপের জল প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। গোলাপের পাপড়ি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এটি ত্বক ও শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- জাতীয় ফুল: গোলাপ অনেক দেশের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃত। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুল হলো গোলাপ, এবং এটি বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপের চাষ করা হয়।
- গোলাপ চাষের প্রাচীনত্ব: গোলাপের চাষ ৫,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। এটি ফারসিতে "গুল" নামে পরিচিত ছিল এবং প্রাচীন সভ্যতার সময়ে এটি একটি মূল্যবান ফুল হিসেবে গণ্য হত।
গোলাপ ফুলের সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য এবং প্রতীকী অর্থের কারণে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এবং বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
সূর্যমুখী ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
সূর্যমুখী ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Helianthus annuus, এবং এটি Asteraceae পরিবারের সদস্য। সূর্যমুখী ফুলটি মূলত উত্তর আমেরিকার স্থানীয় ফুল, তবে বর্তমানে এটি সারা বিশ্বে চাষ করা হয়। সূর্যমুখী তার উজ্জ্বল রঙ এবং বিশাল আকৃতির কারণে খুবই জনপ্রিয়।
সূর্যমুখী ফুল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- 1সূর্যের দিকে তাকানো: সূর্যমুখী গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর ফুল সূর্যের দিকে ঘুরে থাকে। এটি ফটোট্রপিজম নামে পরিচিত, যেখানে গাছটি সূর্যের আলো অনুসরণ করে। তরুণ ফুলগুলো সূর্য উঠার সময় পূর্ব দিকে এবং সন্ধ্যার সময় পশ্চিম দিকে মুখ করে।
- বিপুল পরিমাণ বীজ: একটি সূর্যমুখী ফুলে গড়ে ১,০০০ থেকে ২,০০০ এর বেশি বীজ থাকে। সূর্যমুখীর বীজগুলি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল এর ভাল উৎস।
- গবেষণায় ব্যবহৃত: সূর্যমুখী পোকামাকড়, বিশেষ করে প্রজাপতি এবং মৌমাছির জন্য খাদ্য উৎস। সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ির রঙ এবং গন্ধ এই পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে, যা পরাগায়নে সাহায্য করে।
- তেল উৎপাদন: সূর্যমুখী গাছের বীজ থেকে সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়, যা রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস হিসেবে পরিচিত।
- ঔষধি গুণ: সূর্যমুখী গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, এর পাতা এবং ফুলের নির্যাস কিছু রোগের চিকিৎসায় কার্যকর বলে মনে করা হয়।
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল: সূর্যমুখী ফুল গাছটি ১২ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের একটি।
- কৃষি এবং শিল্প: সূর্যমুখী ফুল কৃষি এবং শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শোভা বাড়ানোর জন্য বাগানে ব্যবহার করা হয় এবং এর বীজগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ তেলবীজ হিসেবে চাষ করা হয়।
- শিল্প এবং সংস্কৃতি: সূর্যমুখী ফুলের একটি বিশেষ স্থানের কারণে এটি শিল্পে এবং সংস্কৃতিতে প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের সূর্যমুখী ফুলের পেইন্টিং বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
সূর্যমুখী ফুল তার উজ্জ্বল রঙ, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং মনোমুগ্ধকর গঠন দ্বারা বাগান ও কৃষিতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
পদ্ম ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
পদ্ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera, এবং এটি Nelumbonaceae পরিবারের সদস্য। পদ্ম ফুল মূলত ভারত, বাংলাদেশ, চীন এবং জাপানের জলাশয়ে জন্মায় এবং এটি ভারতের জাতীয় ফুল।
পদ্ম ফুল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: পদ্ম ফুল হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মে পবিত্র এবং বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এটি দেবী লক্ষ্মী ও গৌতম বুদ্ধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। পদ্ম ফুল সাধারণত সমৃদ্ধি, প্রেম, এবং শুভতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
- জলরোধী গঠন: পদ্ম ফুলের পাতা এবং ফুল জল থেকে বেরিয়ে আসে এবং জলাশয়ের উপর ভাসমান থাকে। এর পাতা বিশেষভাবে জলরোধী, যার ফলে জলটি পাতা থেকে সহজেই পড়ে যায়।
- ঔষধি গুণ: পদ্ম ফুল এবং এর বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, বীজ এবং রন্ধনসামগ্রী অনেক প্রাচীন Ayurvedic ওষুধে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ত্বক, হৃদরোগ এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- জীববৈচিত্র্য: পদ্ম ফুলের পানি এবং পাতা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পোকামাকড় ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য খাদ্য এবং আশ্রয় হিসেবে কাজ করে। এটি জলাশয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক।
- বীজের বিশেষত্ব: পদ্মের বীজ সাধারণত ২০০০ বছর পর্যন্ত অঙ্কুরোদ্গম করতে সক্ষম। এটি দীর্ঘ সময় ধরে জীবিত থাকতে পারে এবং সঠিক পরিবেশ পেলে নতুন গাছ তৈরি করতে পারে।
- স্বাস্থ্য উপকারিতা: পদ্ম ফুলের পাপড়ি এবং বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। এটি শরীরের জন্য পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত।
- ফুল ফোটার সময়: পদ্ম ফুল সকালে ফোটে এবং সূর্যাস্তের সময় বন্ধ হয়ে যায়। এটি দিন এবং রাতের পরিবর্তনের সাথে সাথে ফুলের আচরণ পরিবর্তন করে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশে: পদ্ম সাধারণত শান্ত ও স্থির পানিতে জন্মায়, যেখানে মাটির পুষ্টি বেশি থাকে। এটি বিভিন্ন জলাশয়ের পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে এবং তাতে শৈল্পিক অবদান রাখে।
পদ্ম ফুল তার সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিখ্যাত এবং এটি অনেক মানুষকে আকর্ষণ করে।
গাঁদা ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
গাঁদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Tagetes erecta (এটি আফ্রিকান গাঁদা) এবং Tagetes patula (এটি ফরাসি গাঁদা)। গাঁদা ফুল সাধারণত উজ্জ্বল কমলা এবং হলুদ রঙের জন্য পরিচিত এবং এটি Asteraceae পরিবারের অন্তর্গত। গাঁদা ফুল মূলত মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয় হলেও এখন এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
গাঁদা ফুল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য হলো:
- শুভ ও শুভেচ্ছার প্রতীক: গাঁদা ফুলের ফুল এবং পাতা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং উৎসবে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে, এটি দেবী লক্ষ্মী এবং গৌরীকে নিবেদিত ফুল হিসেবে দেখা হয়।
- পোকামাকড়ের প্রতিকার: গাঁদা ফুলের গন্ধ অনেক ধরনের পোকামাকড়, বিশেষ করে কীটপতঙ্গকে দূরে রাখে। কৃষকরা সাধারণত গাঁদা ফুল চাষ করে অন্যান্য গাছপালার পাশে লাগায় যাতে তারা পোকামাকড় থেকে রক্ষা পায়।
- ঔষধি গুণ: গাঁদা ফুলের পাতা এবং ফুলের বিভিন্ন অংশ প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ এবং ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং কিছু গবেষণায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে।
- বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা: গাঁদা ফুলের বিভিন্ন প্রজাতি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণের জন্য গবেষণায় উল্লেখযোগ্য হয়েছে। এটি কিছু রোগের চিকিৎসায় সম্ভাব্য ঔষধি হিসেবে বিবেচিত।
- বাগানের সৌন্দর্য: গাঁদা ফুল তার উজ্জ্বল রঙ এবং সুগন্ধের জন্য বাগানে খুবই জনপ্রিয়। এটি সাধারণত সীমানা ফুল, ফুলের বাগান এবং পাত্রে চাষ করা হয়।
- বীজের সহজ চাষ: গাঁদা ফুলের বীজগুলি খুব সহজেই চাষ করা যায়। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রায় সারা বছর ফুল ফোটায়।
- সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার: বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুল ব্যবহৃত হয়। এটি বিবাহ, পূজা, এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
গাঁদা ফুল তার রঙিন সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য খুবই জনপ্রিয় এবং এটি বাগানে এবং শোভাময় ফুলের তোড়ায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
চামেলি ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
চামেলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum sambac, এবং এটি Oleaceae পরিবারের সদস্য। চামেলি ফুল সাধারণত তার মিষ্টি সুবাসের জন্য পরিচিত এবং এটি প্রধানত ভারত, পাকিস্তান, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়।
চামেলি ফুল সম্পর্কে কিছু তথ্য হলো:
- সুবাসের জন্য জনপ্রিয়: চামেলি ফুলের গন্ধ অত্যন্ত মিষ্টি এবং সুগন্ধি, যা পারফিউম এবং সৌন্দর্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এই কারণে এটি বহু সংস্কৃতিতে খুবই জনপ্রিয়।
- ঔষধি গুণ: চামেলি ফুলের পাতা এবং ফুলের বিভিন্ন অংশের ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি ত্বক সমস্যার চিকিৎসায়, উদ্বেগ কমাতে, এবং ঘুমের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক প্রাচীন সংস্কৃতিতে একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- প্রতীকী অর্থ: চামেলি ফুল সাধারণত প্রেম, শুদ্ধতা, এবং সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক সংস্কৃতিতে এটি মহিলাদের জন্য বিশেষ প্রিয় এবং প্রেমের অনুভূতি প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- বাগানে চাষ: চামেলি গাছ একটি লতা জাতীয় গাছ এবং এটি বাড়ির বাগানে এবং ফুলের বিছানায় সহজেই চাষ করা যায়। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক যত্নে বছরের পর বছর ফুল ফোটায়।
- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবহার: অনেক দেশ এবং সংস্কৃতিতে চামেলি ফুল ব্যবহার করা হয় বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে। এটি প্রধানত গাঁথন ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- নাগরিক পরিবেশে: চামেলি ফুলের গাছ খুবই সহনশীল এবং এটি নাগরিক পরিবেশে খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি বায়ু পরিষ্কার করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- গন্ধের জন্য ব্যবহার: চামেলি ফুলের গন্ধ সাধারণত সন্ধ্যাবেলা প্রকাশ পায়, এবং অনেকেই এটিকে "রাতের ফুল" হিসেবে অভিহিত করে।
চামেলি ফুল তার সৌন্দর্য, গন্ধ এবং ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত এবং এটি অনেক মানুষের জীবনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
বিভিন্ন ধরনের ফুলের ছবি। বিদেশি ফুলের ছবি।
মন্তব্যঃ বিদেশি ফুলের ছবি
বিদেশি ফুলের ছবি দেখলে মনে হয় যেন অন্য এক দুনিয়ার সৌন্দর্য চোখের সামনে হাজির হয়েছে। প্রতিটি ফুলের রঙ, গঠন এবং অদ্ভুত নিখুঁত নকশা দেখে প্রকৃতির অসীম সৃজনশীলতা বোঝা যায়। বিদেশি ফুলগুলির বিশেষত্ব হলো এদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, যা তাদের স্থানীয় পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই।
জাপানের চেরি ব্লসম, থাইল্যান্ডের রাফ্লেসিয়া, ব্রাজিলের অর্কিড কিংবা নেদারল্যান্ডের টিউলিপ—এইসব ফুলের ছবি যেন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের গল্প বলে। প্রতিটি ছবিতে একটি নিজস্ব সৌন্দর্য এবং আভিজাত্য থাকে, যা আমাদের দেশের ফুলের সৌন্দর্যের সঙ্গে এক ভিন্ন রকম তুলনা করতে প্রলুব্ধ করে। বিদেশি ফুলের ছবি আমাদের মনে প্রকৃতির বৈচিত্র্যের জন্য কৃতজ্ঞতা আর এক অদ্ভুত আকর্ষণের জন্ম দেয়।বিদেশি ফুলের ছবি নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের নিকট শেয়ার করুন। এবং অবশ্যই মন্তব্য করতে ভুলবেন না যেন ধন্যবাদ।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url