ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও

 ডেঙ্গু জ্বর ?

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাস জনিত একটি রোগ। লেডিস প্রজাতির মশার কামড়ে সাধারণত ডেঙ্গুজোর ছড়ায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে কামড়ানোর মাধ্যমে এডিস মশার দেহে ডেঙ্গুভাইরাস ঢুকে। এখনো সাভার সুস্থ কোন মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গু জীবাণু তার দেহে প্রবেশ করে। 

প্রকারভেদ

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। 

এক ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বর। 

দুই হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর। 

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ ও লক্ষণ 

ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বর বা সাধারণ পর্যায়ের লক্ষণ 

উচ্চমাত্রার ঝড় সাধারণত তিন থেকে সাত দিন থাকবে। 

জ্বরে তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। 

জ্বর একেবারে চলে গিয়ে পুনরায় আবার আসতে পারে। 

মাথা চোখ ও চোখের চারিদিকে ব্যথা হয়। 

চোখের মণে লালচে হওয়া। 

ক্লান্তি বোধ হওয়া। 

অবসাদ উদ্যমহীনতা দেখা যাওয়া। 

মাংসপেশী, আহার ও মেরুদন্ডে ব্যথা হওয়া। 

বমি বমি ভাব কিংবা বমি হাওয়া। 

খাবার খেতে অনীহা হওয়া।


হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর বা জটিল পর্যায়ের লক্ষণ ও উপসর্গ 


চামড়ার উপর লালচে ফুসকুড়ি পড়া। 

নাক, মুখ ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ও চামড়া বিবর্ণ হওয়া।

বমির সাথে রক্ত যাওয়া।

রক্ত মিশ্রিত কালো পায়খানা হওয়া। 

অনিদ্রা এবং ক্লান্তি বোধ হওয়া।

প্রচন্ড ব্যথায় অনবরত ক্রন্দন। 

পায়ের চামড়া ফ্যাকাসে, মলিন, ঠান্ডা ও আঠালো হয়ে যাওয়া।

অতিরিক্ত পানির পিপাসা পাওয়া। 

শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া।

মুরসাব বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

রক্তক্ষরণের ফলে হাইপোভলিউমিক শকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোমর ব্যথা অস্থি সন্ধি বা জয়েন্টে ব্যথা চোখের পিছনে ব্যথা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হাড় ব্যথায় এতটাই প্রচন্ড হয় যে মনে হয় হাড় ভেঙ্গে গেছে। এ কারণে এই জ্বরকে "ব্রেক বর্ন ফিভার" বলা হয়ে থাকে। 

সাধারণত ১৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তারাই মারাত্মক হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। হেমলজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর ছাড়ার পরেই রোগীর রক্তকরণ শুরু হয়। এ বিষয়ে ডেঙ্গু রোগীদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরী। বিশেষজ্ঞরা জর্ সেরে যাওয়ার পরে এর সময়টিকে বিপদজনক বলে উল্লেখ করেন। অন্যান্য সাধারণ জ্বর কমে যাওয়ার মানেই হচ্ছে কিছুটা সুস্থ হওয়া। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে এটা ব্যতিক্রম। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরেই রোগীর প্রতি অধিক যত্নশীল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা খুবই প্রয়োজন। 

চিকিৎসা 

ডেঙ্গু জ্বরের এখনো সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। তবে সঠিক সময়ে যথাযথ সহায়ক চিকিৎসায় রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক ডেঞ্জার উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসা উপসর্গ লক্ষণ অনুযায়ী করতে হয়।

ক্লাসিক ডেঙ্গু জ্বর 

ক্লাসিক ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। এক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। জীবন ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, বোমের জন্য এস্টিমিটিল জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরের প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন বা নিরাপদে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। তবে সেরে যাওয়ার পরে রোগীর দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বিষন্নতা দেখা দিতে পারে যা পরবর্তীতে সেরে যায়। 

হেমলোজিক ডেঙ্গু জ্বর 

হেমরোচিত ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে সন্দেহ হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। রবিউল রক্তের প্লেটলেট কাউন্ট (Platelet Count)এবং পিসিভি ( প্যাড্ সেল ভলিউম/ Packed Cell Volume) পরীক্ষা করতে হবে। হ্যাঁ মরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে রোগের প্লেটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে। প্লে-টিলেট count 10 হাজারের নিচে কমে আসলে রোগীকে নিরাপথে প্লে-টিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে এবং প্রতিদিন একবার করে প্লেটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করতে হবে। আর যদি রোগীর প্রত্যক্ষ রক্তক্ষরণ থাকে ( যেমন রক্ত মিশ্রিত কালো রংয়ের পায়খানা, রক্ত বমি হওয়া, নাক দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি) তাহলে সে ক্ষেত্রে রোগীকে রক্ত দেওয়া যেতে পারে। সঠিক সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিলে খুব সহজে এর জটিলতা গুলোকে এড়ানো যায় ও রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। 

মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর ব্যথার জন্য কোন অবস্থাতেই অ্যাসপিরিন বা এইচ প্লাস জাতীয় ঔষধ দেয়া যাবে না কারণ এতে রক্তক্ষরণ এর প্রবণতা বা জটিলতা বেড়ে যায়। 

একবার ডেঙ্গু জ্বর হলে আবার ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে কিনা 

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এই চারটির মধ্যে যেকোনো একটি সেরোটাইপ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে এই ভাইরাসটিতে আবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু বাকি তিনটি সেরোটাইপ ভাইরাসের যেকোনোটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়। তাই একবার ডেঙ্গু জ্বর হলেও আবার ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। 

বাংলাদেশের ডেঙ্গু জ্বর 

জানা যায় পঞ্চাশের দশকে একবার এক ধরনের তীব্র জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় বিশেষজ্ঞদের কাছে এক ধরনের জ্বরের প্রকোপ কাছে ধরা পড়ে। ধারণা করা হয় এই জ্বরটি ছিল ডেঞ্জার। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের শেষে ছিল বাংলাদেশের প্রথম আক্রমণ। ধারণা করা হয় এই জ্বর টিউ ছিল ডেঙ্গু জ্বর।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url