গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
প্রতিটি নারীর চিরকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি হলো গর্ভধারণ। গর্ভ অবস্থায় একজন মহিলাকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে তাদের চলাফোঁড়া এবং খাবারের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হয়।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ফল খাওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কারণ একজন গর্ভবতী মায়ের ভিতরে আরেকটা মানুষ বেড়ে ওঠার জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় সাধারণত যে সকল ফল থেকে মেয়েদের দূরে থাকা উচিত সেগুলো নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভ অবস্থায় খাদ্যের ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখতে হয়। অনেক সময় আমরা হেজিটেশনে ভুগি যে কোনটা খাব এবং কোনটা খাব না। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব এবং আমরা উল্লেখ করে দিব কোন ফলটি আপনি গর্ভাবস্থায় খেতে পারবেন না এবং কেন পারবেন না তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
বারো মাসে একটা ফল পেঁপে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগত ভরপুর ফল এটি। এটি সাধারণত শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। পেঁপেতে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং ভিটামিন থাকে। এছাড়া পেঁপেতে আরোও থাকে ল্যাটেকাস্ নামক উপাদান যেটি গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রসবের নির্দিষ্ট সময়ের আগে পেটে টান ধরায়।
এই উপাদানটি অনেক সময় দেখা যায় যে গর্ভবতী মায়েদের যদি খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে রক্তপাত কিংবা গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এছাড়াও পেঁপে ভ্রূণের বৃদ্ধিতে খারাপ প্রভাব ফেলে। এ সকল বিবেচনা করে গর্ভবতী মায়ের কাঁচা বা পাকা পেঁপে যেটাই হোক না কেন না খাওয়াই ভালো।
মৌসুমি একটু ফল আনারস। আনারস ভিডিও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও এটি সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের ছেড়ে চলার উচিত কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আমার রসে ব্রোমেলিন নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে। ব্রোমেলিন নামক এই এনজাইটি প্রোটিনকে ভেঙ্গে ফেলে।
ফলে গর্ভবতী মায়ের জরায়ু নরম হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণা হতে পারে এমনকি প্রসবের মতো যন্ত্রণাও হতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের মত সমস্যাও ঘটতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খান সে ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মত সমস্যা ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস না খেয়ে অল্প মাত্রায় যদি আনারস খান সেক্ষেত্র উপকৃত হতে পারেন। তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাস আনারস থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
আঙ্গুর
বিভিন্ন ধরনের পোস্টটি গুণে ভরপুর আঙ্গুর সবার জন্য উপকারী হলেও সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের আঙ্গুর খাওয়া থেকে থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। কারণ আঙ্গুর খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যেটি গর্ভবতী মায়েদের ক্ষতির কারণ। আঙ্গুরে থাকা একটি যৌগিক উপাদানের নাম হল রেজভেরট্রোল। রেজভেরেট্রোল নামক উপাদান কি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিষের মত কাজ করতে পারেন।
সাধারণত কাল আঙ্গুরের চামড়া খুবই শুরু হয় যেটি হজম করা অনেকটা কষ্ট। আর আমাদের জানা নেই যে গর্ভাবস্থায় হজম ক্ষমতা অনেকটা দুর্বল থাকে। গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়।
বরফে জমানো বেরি
টাটকা ফলগুলো সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে অপরদিকে বরফে জমানো ফল গুলোর পুষ্ট বোন অনেকটা কমে যায়। তাই সাধারণত বিশেষজ্ঞগণ গর্ভ অবস্থায় টাটকা ফল গুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বরফের জমানো বেরি গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বরফের জমানো ফল না খাওয়ানোয় সবচাইতে ভালো।
ক্যানে ভরা টমেটো
গর্ভাবস্থায়ী গর্ভবতী মহিলাদের সহায়তা যে সকল খাবার খেতে বিশেষ করে ফল খেতে নিষেধ করা হয় সেগুলোর মধ্যে আরও একটি হল ক্যানে ভরা টমেটো। সাধারণত বিভিন্ন সুপারশপে এ ধরনের টমেটো পাওয়া যায়নি। ক্যানে ভরা টমেটোতে প্রিজারভেটিভ নামক উপাদানটি থাকতে পারে। প্রিজারভেটিভ যুক্ত এই টমেটো গর্ভবতী মা ও শিশু ভাইয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই তাদের এটা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
গ্রীস্মের একটি মজাদার ফল । ছোট থেকে বড় সকলের প্রিয় ফল তরমুজ। সকলের প্রিয় ফল তরমুজ হলেও গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তরমুজ সাধারণত আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে শরীরের টক্সিন ধ্বংসের পাশাপাশি এটি গর্ভস্থ শিশুর ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এছাড়াও একজন গর্ভবতী মহিলা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খান তাহলে তার শরীরে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলা দের তরমুজ না খাওয়াই ভালো।
সকলের প্রিয় এবং অতি পোস্টি গুণে ভরপুর একটি ফল খেজুর। পুষ্টির হাজারো ধরনের উপকারিতা থাকা সত্বেও গর্ভবতী মহিলাদের খেতে বারণ করা হয়। অতিরিক্ত খেজুর খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত খেজুর খেলে আপনার জরায়ুর মুখে যন্ত্রণার মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
একজন গর্ভবতী মহিলা প্রতিদিন এক থেকে দুইটি খেজুর খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে খেজুর খাওয়ার ফলে তার কোন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা। যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় তাহলে একটি থেকে দুইটি খেজুর খেতে পারবেন প্রতিদিন।
তেঁতুল
গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত দেখা যায় টক জাতীয় জিনিসের উপর ঝোঁক বাড়ে। ক্ষেত্রে তাদের প্রথম চয়েজ হলো তেতুল বা তেতুলের তৈরি আচার। কিন্তু একজন গর্ভবতী মহিলার জেনে রাখা উচিত যে গর্ভবতী মহিলাদের তেতুল খাওয়া তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যেটা একজন গর্ভবতী মহিলাদের এড়িয়ে চলা উচিত।
একজন গর্ভবতী মহিলা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খান সেক্ষেত্রে তাদের প্রোটেস্টনের উৎপাদনের মাত্রা কমে যেতে পারে। প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে গেলে গর্ভপাতের মত সমস্যাও ঘটতে পারে। এছাড়াও এমনকি গর্ভস্থ শিশুরও ক্ষতি হতে পারে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম ট্রামস্টারে তেতুল খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত।
কলা
গর্ভবতী মহিলাদের যেসব ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছে সেই খাদ্য তালিকার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সকলের প্রিয় একটি ফল হল কলা যেটি খেতে বারণ করা হয়েছে। চিটিনেস এক ধরনের ল্যাকটোজ উপাদান। যেটি এলার্জিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যে সকল গর্ভবতী মহিলা এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদেরকে বিশেষজ্ঞগণ কলা খেতে নিষেধ করে। এছাড়াও কলাতে প্রচুর পরিমাণে সুগার থাকে । গর্ভবতী মায়েদের রক্ত সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা যতদূর সম্ভব কলা কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
গাজর
গাজর আমাদের জন্য খুবই স্বাস্থ্য প্রকার একটি ফল হলেও এটি গর্ভ অবস্থায় বিশেষ করে খেতে নিষেধ করেছেন। তাই একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। খেতে চাইলে সীমিত পরিমানে খেতে পারেন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
একজন সচেতন গর্ভবতী মা যদি তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের ভালো চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পুষ্টিকর ফল
গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত পুষ্টিকর ফল খাওয়া উচিত। একজন মহিলা একসাথে দুইজনার খাবার সরবরাহ করে থাকেন সেজন্য তাদের অতিরিক্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া উচিত। একজন গর্ভবতী মহিলাদের তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যে সকল ফল রাখতে পারবেন এবং নিয়মিত খেতে পারবেন সেগুলো হলো নাশপাতি, আম, ডালেম, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, কমলালেবু মত ফল।
তবে স্মরণ রাখবেন যে সকল মহিলা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিবেন। একজন গর্ভবতী মহিলার প্রতি দিন দুই থেকে তিনটি তাজা ফল খাওয়া উচিত। যেটা মা ও শিশু উভয়ের জন্য খুবই উপকারী।
শেষ কথা:গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে আপনি আপনার কাছের মানুষের গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত এবং কি কি ফল খাওয়া উচিত নয় সে বিষয়ে একটু সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন। তা আপনি যদিগর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না লেখা আর্টিকেলটি এখনো শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে না পড়ে থাকেন তাহলে এখনি পড়ে ফেলুন। এবং আপনার কাছের মানুষদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলুন যেন তারা অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url