ম্যালেরিয়া কি? ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। ম্যালেরিয়া কি এবং ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা লক্ষণ প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান। তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলুন।
আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুর নামসহ এটি বহনকারী পতঙ্গের নাম ও জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক ম্যালেরিয়া কি? ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি পড়া।
ম্যালেরিয়া কি?
ম্যালেরিয়া এক প্রকার পরজীবী দ্বারা সংগঠিত সংক্রামক রোগ যা স্ত্রী এনোফিলিস মশা দ্বারা ছড়ায়। বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্ব দিকের সীমান্ত অঞ্চলে বিশেষ করে তিনটি পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, মৌলি বাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম জেলায় ম্যালেরিয়া সর্বাধিক। এসব এলাকায় সারা বছর এই কম বেশি ম্যালেরার বিস্তার লাভ করে থাকে তবে বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে শেষ দিকে ম্যালেরিয়ার বিস্তার বেশি হয়। ম্যালেরিয়া রোগের সাধারণত যেসব রোগীর মৃত্যুবরণ করে তাদের মধ্যে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের সংখ্যায় বেশি।
ম্যালেরিয়া সংক্রমণ চক্র
প্লাজমোডিয়াম জাতীয় পরজীবী শরীরের প্রবেশ করলে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। এই প্লাজমোডিয়াম একজন রোগী হতে আর একজন সুস্থ লোকের শরীরে একপ্রকার এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রীমশা ধারা সংক্রমিত হয়। ভেক্টর মশা ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ানোর সময় রক্তের সাথে পরজীবী গ্রহণ করে এবং ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জীবন ও বংশবৃদ্ধি হয় এবং মশাটি সংক্রমণ ক্রম হয়ে ওঠে। এই সংক্রমন কম ও মশা সুস্থ মানুষকে কামড় দিলে তার শরীরে ম্যালেরিয়া পরজীবী প্রবেশ করে এবং সেই ব্যক্তি 8 থেকে 10 দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা প্রাপ্ত না হলে বাহক রোগীতে পরিণত হয়। এই রোগীকে ভেক্টর মশা কামড়ানোর সময় ম্যালেরিয়া পরজীবী গ্রহণ করে । এভাবে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ চক্র চলতে থাকে।
প্লাজমোডিয়ার প্রকারভেদ
বাংলাদেশের প্রধানত দুটি প্রজাতির প্লাজমোডিয়াম রয়েছে।
১। প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স (plasmodium vivax)
২। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম (plasmodium falciparum )
এই দুইটি প্রজাতির মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম হচ্ছে মারাত্মক। কারণ প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দ্বারা মারাত্মক ম্যালেরিয়া (shevere malaria) হয়ে থাকে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে রোগের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসক প্রদানের জন্য ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া (uncomplicated malaria- UM)
২। মারাত্মক ম্যালেরিয়া (shevere malaria -SM)
মেয়েরা দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করলে মারাত্মক ম্যানের হার কমে যায় এবং ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর হার পাই।
মারাত্মক ম্যালেরিয়া (shevere malaria -SM) লক্ষণ
- ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় কোন রোগের গত ৪৮ ঘন্টার বেশি জ্বর অথবা জরের ইতিহাস এর সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহের যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ উপস্থিত থাকলে তাকে মারাত্মক ম্যালিরা বলে সনাক্ত করা হবে।
- রোগের অস্বাভাবিক আচরণ করছে বা অজ্ঞান অথবা খিচুনি হচ্ছে।
- দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারছে না
- বমি বমি ভাব বা বমি হচ্ছে।
- মুখে খেতে পারছে না।
- মারাত্মক রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।
- শরীরের যে কোন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
- শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
প্রসবের পরিমাণ খুব কম। এই লক্ষণযুক্ত রোগীকে যতদূর সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করুন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ
- ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায়লেরা প্রতিরোধের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থাগুলি হচ্ছে
- দ্রুতরগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করা।
- মশার কামড় হতে আত্মরক্ষা করা।
- এলাকাতে মশার জন্ম ও বংশবিস্তার যাতে না করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
- দ্রুত মহামারী চিহ্নিত করা ও তা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মশার কামড় হতে আত্মরক্ষার উপায়
যে সকল মশা কামড়ালে ম্যালেরিয়া হয় সে সকল মশার কামড় হতে নিজেকে আত্মরক্ষার কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেমন
- ঘুমানোর সময় মশারি ( বিশেষ করে কীটনাশক যুক্ত কিংবা কীটনাশককে চুবানো ) ব্যবহার করতে হবে।
- মশা তাড়ানোর দোয়া যেমন মশার কয়েল ধোঁয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
- যতটুক সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে হবে। সম্ভব হলে সবার ঘরের দরজা জানালায় mosquito proof net ব্যবহার করতে হবে।
চিকিৎসা
জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া (uncomplicated malaria- UM)
ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় যদি কোন রোগের গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্বর বছরের ইতিহাস থাকে এবং জ্বরের অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কারণ না থাকে, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হিসেবে ধারণা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। যদি Blood Slide Examination (BSE) বা Rapid Diagnostic Test ( RDT) ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জন্য পজেটিভ হয়, তবে রোগীকে Uncomplicated Malaria- UM হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কো আর্টেম (Coarte) ( আর্টিমিথার+ লুমিফ্যানট্রিন) ট্যাবলেট দিয়ে ডাস্টার্ড অনুযায়ী এই রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
ওজন অনুযায়ী কো-আর্টেমের ডোজ চার্ট
ওজন (বয়স,বছর)
|
ট্যাবলেটের সংখ্যা ডোজের আনুমানিক সময়
|
তিন ঘন্টা
|
আট ঘন্টা
|
২৪ ঘন্টা
|
৩৬ ঘন্টা
|
৪৮ ঘন্টা
|
৬০ ঘন্টা
|
5 - 14 (<3)
|
1 ট্যাবলেট
|
1 ট্যাবলেট
|
1 ট্যাবলেট
|
1 ট্যাবলেট
|
1 ট্যাবলেট
|
1 ট্যাবলেট
|
15 - 24 (3-9)
|
2 ট্যাবলেট
|
2 ট্যাবলেট
|
2 ট্যাবলেট
|
2 ট্যাবলেট
|
2 ট্যাবলেট
|
2 ট্যাবলেট
|
25 - 34 (9-14)
|
3 ট্যাবলেট
|
3 ট্যাবলেট
|
3 ট্যাবলেট
|
3 ট্যাবলেট
|
3 ট্যাবলেট
|
3 টেবলেট
|
>34 (>14)
|
4 ট্যাবলেট
|
৪ ট্যাবলেট
|
4 ট্যাবলেট
|
4 ট্যাবলেট
|
4 ট্যাবলেট
|
4 ট্যাবলেট
|
তথ্যসূত্র: কমিউনিটি প্যারামেটিক কোর্স তৃতীয় পত্র
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস কো-আর্টেম দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে না। পাঁচ কেজি কম ওজনের শিশুদেরকে কুইনিন যে চিকিৎসা করতে হবে। ট্যাবলেট কুইনিনি ১০এমজি/কেজি/ডোজ তিনবার করে সাত দিন (মোট ২১ ডোজ) দিতে হবে।
ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া
কোন রোগের গতা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্বর বা জ্বরের ইতিহাস থাকলে এবং জ্বরের অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কারণ না থাকলে ম্যালেরিয়া হিসেবে ধারণা করা যেতে পারে। রোগীর Blood Slide Examination (BSE) বা Rapid Diagnostic Test ( RDT) ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার জন্য পজেটিভ হলে ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া মেয়েরা হিসেবে শনাক্ত করতে হবে ও নিম্নের চার্ট অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
চিকিৎসার চার্ট
দিন
|
ঔষধ
|
ওজন (কেজি)
|
3-5
|
6-9
|
10-19
|
20-29
|
30-39
|
40-49
|
50+
|
প্রথম
|
ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট: 150 মি: গ্রা:
|
0
|
1/2
|
1
|
1/2
|
2
|
3
|
4
|
দ্বিতীয়
|
ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট: 150 মি: গ্রা: | |
|
0
|
1/2
|
1
|
1/2
|
2
|
3
|
4
|
তৃতীয়
|
ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট: 150 মি: গ্রা: | |
|
0
|
1/2
|
1
|
1/2
|
2
|
3
|
4
|
চতুর্থ
|
প্রিমাকুইন ট্যাবলেট: 15 মি: গ্রা:
|
|
0
|
1/2
|
1/2
|
1
|
2
|
3
|
4
|
প্রিমাকুইন সর্বমোট ১৪ দিন প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম/দিন* শিশুদের ক্ষেত্রে ০.৩ মিলিগ্রাম/ কেজি/ প্রতিদিন
|
তথ্যসূত্র: কমিউনিটি প্যারামেটিক কোর্স তৃতীয় পত্র
শেষ কথা:ম্যালেরিয়া কি? ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ম্যালেরিয়া কি? ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে লেখাএই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে তাহলে আপনি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের নিকট শেয়ার করুন।ম্যালেরিয়া কি? ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এই লেখা আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই মন্তব্য করবেন ধন্যবাদ।
আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url