সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে ২০২৬ – সার্বিয়া যেতে বয়স কত লাগে জানুন

সার্বিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি নিম্ন আয়ের দেশ, যা এখনো সেনজেনভুক্ত হয়নি। বাংলাদেশ থেকে অনেকে পড়াশোনা, চাকরি বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইউরোপের এই দেশটিতে যেতে আগ্রহী। তাদের সার্বিয়া যেতে সঠিক খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।
সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে
সার্বিয়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার ক্যাটাগরি ভিন্ন হয়, আর এই ক্যাটাগরি ও প্রসেসিং মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে ভিসার খরচও ভিন্ন হয়ে থাকে। যারা বাংলাদেশ থেকে সহজে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান, তাদের জন্য সার্বিয়া একটি গন্তব্য হতে পারে। এজন্য আগ্রহীদের সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে, সার্বিয়া যাওয়ার উপায়, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং সার্বিয়া যেতে বয়স কত লাগে সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

সার্বিয়া কোন কোন ভিসা চালু আছে

যারা বর্তমানে সার্বিয়া যেতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে যে সার্বিয়াতে কী কী ধরনের ভিসা চালু আছে। সার্বিয়া একটি উন্নত দেশ হওয়ায় এর আইন-কানুন তুলনামূলকভাবে কঠোর।
সার্বিয়া যেতে কত টাকা খরচ হতে পারে, তা জানার আগে সেখানে প্রচলিত ভিসার ধরনগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একেক ধরনের ভিসার জন্য খরচ একেক রকমভাবে নির্ধারিত থাকে। তাই, এখন সার্বিয়াতে বর্তমানে চালু থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিসাগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।
  • স্টুডেন্ট ভিসা।
  • ভিজিট ভিসা।
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইত্যাদি।

সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে

বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যাওয়ার মোট খরচ ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রধানত স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক ভিসা এই ক্যাটাগরিগুলো রয়েছে। যারা সরকারিভাবে এই দেশে যেতে চান, তাদের খরচ তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। মূলত, সার্বিয়া যাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় আপনার নির্বাচিত ভিসার ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সার্বিয়া কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, সেক্ষেত্রে অন্যান্য ভিসার তুলনায় খরচ অনেক বেশি হবে। তবে, যদি টুরিস্ট ভিসা অথবা স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চান, তাহলে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম পড়বে।
সার্বিয়া ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি। এই দেশে কাজের জন্য যেতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই খরচ বেশি হবে। তবে, সার্বিয়া সরকার প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেয়। সেই সুযোগে আপনারা সরকারিভাবে অল্প খরচে ঘরে বসে নিজেরাই অনলাইনে সার্বিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও, সার্বিয়াতে যদি আপনার কোনো পরিচিত বা কাছের মানুষ থাকে, তাহলে তাদের সহায়তায় এজেন্সির মাধ্যমেও সার্বিয়া কাজের ভিসা বা অন্যান্য ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর অবশ্যই দক্ষতা থাকতে হবে। বিশেষত, সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাজের জন্য যেতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কাজের ওপর আপনার ভালো অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।
বর্তমানে সার্বিয়া যেতে চাইলে সব মিলিয়ে সর্বমোট ৭ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। তবে, যদি সরকারিভাবে ভিসা প্রসেসিং করা সম্ভব হয়, তাহলে ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকার মধ্যে সার্বিয়া যাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, যদি ভ্রমণ অথবা পড়ালেখা করার উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাহলে সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের এই দেশটিতে যেতে ইচ্ছুকদের অবশ্যই সার্বিয়া যাওয়ার খরচ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। একই সাথে, এই দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় দালালদের কাছ থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

সার্বিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে

বর্তমানে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য সার্বিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসায় যাচ্ছেন। তবে সার্বিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে আনুমানিক কত টাকা খরচ হয়, তা অনেকেরই অজানা থাকে। সাধারণত, সার্বিয়ার অন্যান্য ভিসার তুলনায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
বিশেষ করে, যদি কেউ স্কলারশিপ পেতে পারেন, তবে একদম অল্প খরচে সার্বিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে সার্বিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে এই ব্যয়ের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

সার্বিয়া ভিজিট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে

বর্তমানে অনেকে সার্বিয়া ভিজিট ভিসায় ভ্রমণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে এই ভিজিট ভিসা পেতে বা ভিসা করতে কত টাকা খরচ হয়, তা তাদের জানা থাকে না। সাধারণত, সার্বিয়া ভ্রমণের জন্য সার্বিয়া ভিজিট ভিসার মেয়াদ ৩ মাস এবং ৬ মাস পর্যন্ত থাকে।
যদি সার্বিয়া ভিজিট ভিসায় ৩ মাসের জন্য যেতে চান, তবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়াও, যদি ৬ মাসের জন্য সার্বিয়া ভিজিট ভিসায় যেতে চান, তাহলে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে।

সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে

ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যে কোনো দেশেই যেতে সাধারণত সবচেয়ে বেশি টাকা লাগে, এবং সার্বিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাবতীয় সকল খরচসহ যেতে প্রায় ৭,৫০,০০০ টাকা থেকে ৯,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

সার্বিয়ায় জীবনযাত্রার খরচ কেমন

সার্বিয়ায় জীবনযাত্রার খরচ কেমন, তা নির্ভর করে আপনি কোথায় থাকছেন এবং আপনার জীবনযাপন কেমন তার ওপর। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, সার্বিয়া পশ্চিম ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী একটি দেশ।
সার্বিয়ায় জীবনযাত্রার খরচ কেমন
রাজধানী বেলগ্রেড কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও অন্যান্য শহরগুলিতে খরচ আরও কম। মোটামুটি একটি ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

১. বাসস্থান

বাসস্থানের খরচ একটি বড় অংশ। এটি শহর এবং অবস্থানের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।
  • বেলগ্রেড: শহরের কেন্দ্রে একটি এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে একই আকারের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া সাধারণত অনেক কম।
  • অন্যান্য বড় শহর: এই শহরগুলিতে ভাড়ার খরচ বেলগ্রেডের তুলনায় বেশ কম। সাধারণত, মাসিক ইউটিলিটি বিল মাঝারি আকারের একটি অ্যাপার্টমেন্টের জন্য যুক্তিসঙ্গত।

২. খাদ্য ও মুদি খরচ

সার্বিয়াতে খাবারের দাম বেশ সাশ্রয়ী, বিশেষ করে আপনি যদি স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা করেন।
  • রেস্তোরাঁ: সাধারণ মানের একটি রেস্তোরাঁয় একবেলার খাবারের খরচ মধ্যম মানের। তবে, বিলাসবহুল বা উচ্চমানের রেস্তোরাঁর খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে।
  • মুদি সামগ্রী: দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন দুধ, ডিম, রুটি, মাংস এবং ফল ও সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কম। স্থানীয় বাজারে দামদর করার সুযোগও থাকে।

৩. পরিবহন

সার্বিয়াতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশ সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।
  • মাসিক পাস: গণপরিবহণের জন্য মাসিক টিকিট বা পাসের দাম সাধারণত খুব বেশি নয়, যা নিয়মিত যাতায়াতকারীদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
  • ট্যাক্সি: ট্যাক্সি ভাড়াও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।

৪. অন্যান্য খরচ

  • ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন: ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের মাসিক বিল অন্যান্য পশ্চিমা দেশের তুলনায় কম।
  • বিনোদন: সিনেমা, থিয়েটার, এবং বিনোদনমূলক কার্যকলাপের খরচ সাধারণত সহনীয়।
  • স্বাস্থ্যসেবা: সার্বিয়ার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে, যদিওবেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যায়।
একজন একক ব্যক্তির জন্য বাসস্থান এবং অন্যান্য মৌলিক খরচ যোগ করলে একটি মোটামুটি অঙ্কের প্রয়োজন হতে পারে। তবে, আপনার জীবনযাত্রা কতটা ব্যয়বহুল হবে তা মূলত নির্ভর করে আপনি কোন শহরে থাকেন, কেমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন এবং আপনি কতটা বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন তার ওপর। মোটকথা, পশ্চিম ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার তুলনায় সার্বিয়াতে একটি আরামদায়ক জীবনযাপন করা অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

সার্বিয়া যাওয়ার উপায় ২০২৬

বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবেই সার্বিয়া যাওয়া সম্ভব। সরকারিভাবে কাজের ভিসা নিয়ে সার্বিয়া যেতে হলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বোয়েসেল- এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
এই সুযোগগুলো পেতে, আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে বোয়েসেল ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়-এর মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে নজর রাখতে হবে। যখনই কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা সার্কুলার প্রকাশিত হবে, দ্রুত অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আবেদন করতে হবে।
বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা ও টুরিস্ট ভিসা নিয়েও সার্বিয়া যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনার ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিকটস্থ সার্বিয়া দূতাবাসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
এছাড়াও, আপনি চাইলে কোনো বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে সার্বিয়ার ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এই জন্য এজেন্সিকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। তবে, সতর্ক থাকতে হবে যেন ভুলেও অগ্রিম টাকা দিয়ে এজেন্সির সঙ্গে ভিসা পাওয়ার চুক্তি না করা হয়।

সার্বিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে

সার্বিয়া যেতে হলে খরচের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার। সার্বিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ, যার অফিশিয়াল ভাষা হলো সার্বিয়ান। তবে সেখানে ইংরেজিও মোটামুটি প্রচলিত।
সার্বিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে
বাংলাদেশ থেকে সাধারণত পাঁচ ধরনের ভিসা নিয়ে সহজে সার্বিয়া যাওয়া যায়:
  • ভিজিট ভিসা
  • টুরিস্ট ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • কাজের ভিসা (ওয়ার্ক পারমিট ভিসা)
  • বিজনেস ভিসা
এই পাঁচ ধরনের ক্যাটাগরির মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন। তবে, বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ মানুষ কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতেই সার্বিয়া যান। কাজের ভিসার জন্য সাধারণত নিম্নোক্তকাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়ে থাকে।
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণপত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • জব অফার লেটার
  • ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন পত্র
  • ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (প্রয়োজনে)
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট

সার্বিয়া ভিসা আপডেট ২০২৬

সার্বিয়াতে যেতে কত টাকা লাগে, সার্বিয়ার বেতন কেমন, এবং সার্বিয়া ভিসা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য আপনার জানা জরুরি। ২০২৬ সালে সার্বিয়া সরকার বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশটির কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে, ঢাকার একটি স্বীকৃত রিক্রুটিং এজেন্সি, এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ বিডি, সার্বিয়ার একটি টেক্সটাইল কোম্পানির জন্য ৬০০ জন কর্মী নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে।
সার্বিয়ার শ্রমবাজার বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনাময়। দেশটির সরকার প্রায় এক লাখ দক্ষ বিদেশি কর্মীর জন্য ভিসা ইস্যু করার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়াও, ২০২৭ সালের ইউরো এক্সপো আয়োজনের জন্য সার্বিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল সিস্টেমে সার্বিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সার্বিয়া ২৫ হাজার কর্মীর আবেদন গ্রহণ করবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৫০,০০০ কর্মী নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে সার্বিয়ার ভিসা রেশিও কেমন

২০২৬ সালে সার্বিয়া সরকার একটি বড় ঘোষণা দিয়েছে; তারা এই বছর এক লক্ষ ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার বিশাল পরিকল্পনা নিয়েছে। সার্বিয়া এখন তাদের শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মীদের বেশি করে স্বাগত জানাচ্ছে, যা সার্বিয়া গমনে আগ্রহীদের জন্য একটি দারুণ খবর।
এতে কাজের সুযোগের সংখ্যা বেড়েছে, তবে মনে রাখতে হবে— যত বেশি সুযোগ, তত বেশি প্রতিযোগিতা। তাই আপনাকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে দক্ষতা তৈরি করে সার্বিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সার্বিয়া এবার নতুন করে বাংলাদেশ থেকে ২৫ হাজার কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এই নতুন কর্মী নিয়োগ হবে সার্বিয়ার কৃষি, নির্মাণ, হোটেল এবং গার্মেন্টস সেক্টরে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপে কাজের এক নতুন দরজা খুলে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে এবার বেতন ও চুক্তির শর্তে। পূর্বের তুলনায় বেতন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

সার্বিয়া যেতে কত বছর বয়স লাগে?

বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়াতে বিভিন্ন ধরণের ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে, ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য সবচেয়ে অনুকূল বয়সসীমা হলো ২০ থেকে ৪০ বছর। এই বয়সের প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত অনুমোদন পান এবং ভালো কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকে। ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর।
টুরিস্ট (পর্যটন) ভিসা: এই ভিসার ক্ষেত্রে সব বয়সের মানুষই আবেদন করতে পারবে। তবে, আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে অবশ্যই অভিভাবকের অনুমতিপত্র প্রয়োজন হবে। অন্যান্য ভিসার মতোই, টুরিস্ট ভিসার জন্যও সার্বিয়া যেতে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ভিসা আবেদনের বর্তমান অবস্থা ও পরামর্শ: বর্তমানে সার্বিয়াতে যাওয়ার জন্য একটি ভালো সময়, কারণ এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে ভিসা ইস্যু হচ্ছে। এছাড়াও মনে রাখা দরকার, সার্বিয়াতে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা সব সময়ই বেশি।

সার্বিয়া থেকে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়?

সার্বিয়া ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি দেশ। এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সড়ক বা রেলপথে বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশে সরাসরি যাওয়া যায়। এছাড়া বিমানপথে তো পৃথিবীর যেকোনো দেশেই যাওয়া সম্ভব, তবে এক্ষেত্রে ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে।
সার্বিয়া থেকে আপনি যেসব দেশে যেতে পারেন, তার একটি বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
১. সার্বিয়ার প্রতিবেশী দেশসমূহ: সার্বিয়ার সীমান্তের সাথে মোট আটটি দেশের সংযোগ রয়েছে। আপনি যদি সার্বিয়াতে বৈধভাবে থাকেন, তবে ভ্রমণ ভিসার নিয়ম মেনে এই দেশগুলোতে সরাসরি যেতে পারবেন:
  • হাঙ্গেরি: এটি সার্বিয়ার উত্তরে অবস্থিত এবং একটি শেনজেনভুক্ত দেশ। সাধারণত সার্বিয়া থেকে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার জন্য এই সীমান্তটি অনেকেই ব্যবহার করেন।
  • রোমানিয়া: সার্বিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি একটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) সদস্য দেশ, তবে এখনও শেনজেন জোনে পুরোপুরি যোগ দেয়নি।
  • বুলগেরিয়া: সার্বিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটিও একটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) সদস্য দেশ, যারা সম্প্রতি আংশিকভাবে শেনজেন অঞ্চলে যুক্ত হয়েছে।
  • উত্তর মেসিডোনিয়া: সার্বিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত।
  • আলবেনিয়া: সার্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
  • মন্টিনিগ্রো: সার্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
  • বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: সার্বিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত।
  • ক্রোয়েশিয়া: সার্বিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত এবং এটিও একটি শেনজেনভুক্ত দেশ।
যদিও এই দেশগুলোতে সরাসরি যাওয়া যায়, একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আপনার
অবশ্যই সেই দেশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, হাঙ্গেরি
বা ক্রোয়েশিয়াতে যেতে আপনার শেনজেন ভিসা লাগবে।
২. ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়া: সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা শেনজেন জোনের সদস্য না হলেও, এটি ইউরোপের খুব কাছাকাছি একটি দেশ। তাই অনেকে সার্বিয়াকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রবেশের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে দেখেন। সার্বিয়া থেকে বৈধভাবে ইউরোপের শেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সার্বিয়াতে থাকার সময় সেখানে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
সার্বিয়ার বৈধ রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার পর অনেকেই শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন। তবে মনে রাখবেন, শুধু টিআরসি থাকলেই আপনি শেনজেনভুক্ত দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেন না।
৩. অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্য: সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড-এ একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে সরাসরি বা কানেক্টিং ফ্লাইটে যাওয়া যায়। যেমন:
  • মধ্যপ্রাচ্য: তুরস্ক, দুবাই ইত্যাদি।
  • ইউরোপের মূল শহর: লন্ডন, প্যারিস, আমস্টারডাম, ফ্রাঙ্কফুর্ট ইত্যাদি।
  • অন্যান্য গন্তব্য: সার্বিয়ার সাথে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের রুট অনুযায়ী অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্যেও যাওয়া যায়।
৪. যারা ইউরোপে প্রবেশের পথ হিসেবে ব্যবহার করেন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু মানুষ সার্বিয়াকে একটি অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ইউরোপের দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। সার্বিয়া বা প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়লে জেল বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি থাকে।
আবার অনেকে সার্বিয়াতে বৈধভাবে কাজ করার পর (ওয়ার্ক পারমিট/টিআরসি নিয়ে) সেখান থেকে বৈধ উপায়ে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করার চেষ্টা করেন। সার্বিয়া থেকে আপনি যে দেশেই যেতে চান না কেন, আপনার পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক ভিসা এবং ভ্রমণের বৈধ কাগজপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। আইনসম্মতভাবে ভ্রমণ করাই সবসময় নিরাপদ ও সঠিক পথ।

সার্বিয়া কি সেনজেন হবে?

সার্বিয়া বর্তমানে শেনজেন এলাকার সদস্য নয়, তবে তারা এই জোনে যুক্ত হতে আগ্রহী। সার্বিয়া সরকার শেনজেনের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, শেনজেনের সদস্যপদ প্রাপ্তি বিভিন্ন শর্ত পূরণের উপর নির্ভরশীল। ভবিষ্যতে সার্বিয়া শেনজেন জোনে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু কখন বা ঠিক কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এই বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে হলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ এবং সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুসরণ করা উচিত।

সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যেতে কত সময় লাগে?
উত্তর: বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার দূরত্ব প্রায় ৬,৫৮৪ কিলোমিটার। বাংলাদেশ থেকে বিমানে করে সার্বিয়া যেতে গড়ে প্রায় ৯ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে।
প্রশ্ন: সার্বিয়া ভিসা পেতে কত দিন লাগে?
উত্তর: সার্বিয়া ভিসা প্রক্রিয়াকরণ হতে ৫ মাস থেকে ৬ মাস সময় লাগে। তবে এই ভিসা পেতে সাধারণত ১৪ দিন থেকে ৩০ দিন সময় লাগে।
প্রশ্ন: সার্বিয়া কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন?
উত্তর: না, সার্বিয়া এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়নি।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় কাজের সুযোগ কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: বিভিন্ন খাতে, যেমন আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং নির্মাণে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় বিদেশি কর্মীদের জন্য কী সুবিধা আছে?
উত্তর: বিদেশি কর্মীদের জন্য উচ্চ বেতন ও সুবিধাজনক জীবনযাত্রার সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় কাজের পরিবেশ কেমন?
উত্তর: সার্বিয়ায় কাজের পরিবেশ সাধারণত সহযোগিতাপূর্ণ এবং উন্মুক্ত।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কেমন?
উত্তর: সার্বিয়ার স্বাস্থ্যসেবা সেবা তুলনামূলকভাবে ভালো এবং খরচও কম।
প্রশ্ন: কি কারণে সার্বিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী হওয়া উচিত?
উত্তর: উচ্চ বেতন, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় কাজ করার জন্য কোন বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন?
উত্তর: কাজের ধরণ অনুযায়ী প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় আবহাওয়া কেমন?
উত্তর: সার্বিয়ায় ঋতুবিভাগ আছে; গ্রীষ্মে গরম এবং শীতে ঠান্ডা হয়।
প্রশ্ন: খাদ্য সামগ্রীর দাম কেমন?
উত্তর: সার্বিয়ায় খাদ্য সামগ্রীর দাম সাশ্রয়ী, যা খরচ কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: সার্বিয়ায় চাকরি পাওয়ার জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?
উত্তর: বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট বা নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
প্রশ্ন: সার্বিয়া ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?
উত্তর: সার্বিয়া ১ টাকা বাংলাদেশের ১.১৪ টাকা

লেখকের শেষ মতামত

অনেকেই বর্তমানে কাজের ভিসা বা ভ্রমণের জন্য সার্বিয়া যেতে চান। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই সার্বিয়া যেতে মোট কত খরচ হয়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আজকের এই লেখায় সার্বিয়া যেতে মোট কত টাকা লাগে, বিভিন্ন ধরনের ভিসার খরচ এবং সার্বিয়া যেতে সর্বনিম্ন বয়স কত হওয়া প্রয়োজন, সেই তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
আশা করা যায়, এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা সার্বিয়া যেতে প্রয়োজনীয় খরচসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য জানতে পেরেছেন। ভিসা সম্পর্কিত এ ধরনের আরও নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
Sharing is Caring

Leave a Comment