আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে: বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম, যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের বহু মানুষ। অনেকেই এখন আমেরিকায় বসবাস করছেন। আমেরিকা যেতে আগ্রহীদের অবশ্যই সেখানকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে হবে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা শিক্ষা, কাজ, চিকিৎসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এই দেশে যেতে চান। তবে আমেরিকার ভিসা পাওয়া সহজসাধ্য নয়। আমেরিকার ভিসা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা থকতে হবে এবং আমেরিকা যেতে মোট কত টাকা লাগে, সে বিষয়েও ধারণা নিতে হবে। এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আমেরিকা যেতে খরচের পরিমাণ, সেখানে কাজের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
আমেরিকা কোন কোন ভিসা চালু আছে
বর্তমানে সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা একটি, যা বিশ্বের আর্থিক ও শাসন ক্ষমতার মূল উৎস হিসেবেও পরিচিত। আমাদের বাংলাদেশের বহু মানুষ আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। অনেকেই সেখানে যেতে চান, কিন্তু ভিসার জন্য কত টাকা খরচ হবে, তা তাদের জানা নেই।
তবে এর আগে আপনাদের জেনে রাখা দরকার, আমেরিকায় কোন কোন ভিসা চালু আছে। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা চালু রয়েছে এবং একেক ভিসার মূল্য একেক রকম। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আমেরিকা যাওয়ার জন্য কী কী ভিসা রয়েছে।
- Student Visa – স্টুডেন্ট ভিসা।
- Tourist Visa – টুরিস্ট ভিসা।
- Work Visa – কাজের ভিসা।
- Medical Visa – চিকিৎসা ভিসা।
আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে ২০২৬
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে, যেমন স্টাডি ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, মেডিকেল ভিসা, টুরিস্ট ভিসা ইত্যাদি। তবে ভিসার ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবেদনের খরচও ভিন্ন হয়। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আছেন যারা আমেরিকার ভিসা করতে চান, কিন্তু এর জন্য ঠিক কত টাকা খরচ হয়, তা অনেকেরই অজানা।
আমি আমেরিকার ভিসা খরচ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এখানে যে খরচটি উল্লেখ করা হবে, তা হলো সর্বনিম্ন আনুমানিক ব্যয়। তবে যদি দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে আমেরিকা যেতে চান, তাহলে আপনার টাকার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
তবে আমি এখানে স্বাভাবিক যে খরচ হয়, সেটি উল্লেখ করার চেষ্টা করব। আপনার যদি আমেরিকায় নিকটাত্মীয় থাকে এবং তাদের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করেন, তাহলে আপনার খরচ অনেক কম পড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে চাইলে আনুমানিক ৯ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এই খরচটি হলো বেসিক বা স্বাভাবিক মূল ব্যয়।
নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে গেলে এর চেয়ে বেশি খরচ সাধারণত হয় না। অন্যদিকে, এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চাইলে আপনার খরচ ২০ থেকে ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা কখনো কখনো ৩০ লাখও ছাড়িয়ে যায়। তবে আপনার যদি ১২ লক্ষ টাকা বাজেট থাকে, তবে আপনি আমেরিকাতে যেতে পারবেন।
টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে মোট কত টাকা লাগে, তা জানা যেমন আপনার জন্য জরুরি, ঠিক তেমনি টুরিস্ট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে, সেটাও জেনে রাখা প্রয়োজন। আমেরিকা ভিসা পাওয়ার জন্য ব্যাংকে ঠিক কত টাকা আছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসা বা বিজনেস ভিসার জন্য মূলত B1 ও B2 ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে হয়। B1 ক্যাটাগরিটি হলো তাদের জন্য, যারা কোনো বিজনেস মিটিং বা ব্যবসার আমন্ত্রণে আবেদন করেন। অন্যদিকে, B2 ক্যাটাগরিটি হলো টুরিস্ট ভিসা। মূলত, আপনি যদি আমেরিকার পছন্দের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে চান, তবে শুধু ভিসা অ্যাপ্লাইয়ের জন্যই আপনাকে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
যেহেতু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এজেন্সির মাধ্যমে টুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন, তাই এজেন্সির খরচ, বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচসহ আপনার মোট ব্যয় পাঁচ লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে B2 টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনার ভিজিট করার প্রয়োজনীয়তা থাকা আবশ্যক।
আপনি যে সত্যিই একজন ভ্রমণকারী বা টুরিস্ট, তা কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। আর এই প্রমাণের জন্য শুধু ভারত বা দু-একটি দেশে ভ্রমণ করে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য আবেদন করে ফেললে হবে না। নিজেকে সত্যিকারের ট্রাভেলার হিসেবে প্রমাণ করতে হলে আপনাকে বছরে দু-একবার নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে হবে।
এই ধরনের একটি ভালো ট্রাভেল হিস্ট্রি থাকা আপনার জন্য জরুরি। ট্রাভেল হিস্ট্রি তৈরির জন্য আপনাকে এশিয়ার দেশগুলোতে ভ্রমণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাই, জাপান, কোরিয়া এসব দেশে আপনার ভিজিট ভিসা থাকতে হবে।
এতে আপনার প্রোফাইল অনেক শক্তিশালী হবে। আমেরিকার ভিসা নির্ভর করে ভিসা কনস্যুলার এবং ইন্টারভিউয়ের ওপর। চেষ্টা করবেন DS-160 ফর্মটি নিজে পূরণ করতে। এতে ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া সহজ হবে।
স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে এবং যাওয়ার উপায় জানার পাশাপাশি স্টুডেন্ট ভিসায় (হোক ব্যাচেলর বা মাস্টার্স) কত টাকা খরচ হয়, তা জানা আপনার জন্য জরুরি। ব্যাচেলরের ক্ষেত্রে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ফ্রি থাকে, আবার মাস্টার্সের ক্ষেত্রেও ফি কম থাকতে পারে।
📌আরো পড়ুন👉লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে
তবে ধরে নেওয়া যাক, আপনার আবেদন ফি লাগবে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এর সাথে দূতাবাসে জমা দিতে হবে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। এছাড়া, সেভিস ফি বাবদ খরচ হবে ৩৫০ ডলার। অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক খরচ মিলিয়ে ভিসা হওয়ার আগেই প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
এই খরচটি মূলত অনার্স বা মাস্টার্স দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধুমাত্র অ্যাপ্লিকেশন ফির মধ্যেই অনার্স ও মাস্টার্সের জন্য সামান্য পার্থক্য থাকে। তবে স্পাউস (স্বামী/স্ত্রী) সহ আসলে অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হয়, তা জানা প্রয়োজন। স্পাউস সহ আসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেমন কোনো খরচ নেই।
অতিরিক্ত খরচ বলতে কেবল এমবাসি ফি-টি দিতে হয়। F1 ভিসার জন্য আপনি যে ফি দেবেন, আপনার স্পাউস (F2) এর জন্যেও আরেকটি এমবাসি ফি জমা দিতে হবে। এরপর আসা যাক টিউশন ফির কথায়। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন হয় এবং প্রতি বছর কোথাও ১০ হাজার ডলার, কোথাও ১২ হাজার ডলার, আবার কোথাও ১৫ হাজার ডলারও হতে পারে।
সেই ক্ষেত্রে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন, সেখানে ছয় মাসের টিউশন ফি আপনাকে আনতে হবে। এর সঙ্গে চলাফেরা ও থাকা-খাওয়ার জন্য যে খরচ হবে, সেটাও নিয়ে যেতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশী টাকায় ছয় মাসের জন্য প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে আপনি আমেরিকা আসতে পারবেন।
ওয়র্ক পারমিট ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে, তা জানাতে গিয়ে এবার কাজের ভিসা নিয়ে দেশটিতে যাওয়ার খরচ সম্পর্কে জানাবো। সরকারিভাবে কাজের ভিসা নিয়ে সেখানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ হবে প্রায় ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। তবে বেসরকারিভাবে এজেন্সির সহযোগিতায় কাজের ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে খরচের পরিমাণ সাধারণত বেশি হয়। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
ড্রইভিং ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে, তা জানতে গিয়ে অনেকে দেশটির ড্রাইভিং ভিসার খরচ সম্পর্কেও প্রশ্ন করেন। দেশটিতে মালিকানাধীন ড্রাইভারের পাশাপাশি ট্রাক ড্রাইভারদের চাহিদাও প্রচুর। সেখানে একজন ট্রাক ড্রাইভারের মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ড্রাইভিং ভিসা মূলত ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসার অন্তর্ভুক্ত। ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যেতে খরচের পরিমাণ ৬ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা হতে পারে।
ক্লিনার ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে?
অনেকেই বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার খরচের ব্যাপারে জানতে চান, বিশেষ করে ক্লিনার ভিসায় যাওয়ার খরচ সম্পর্কে। কারণ, দেশটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ক্লিনার ভিসায় আমেরিকা যেতে সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
মেডিকেল ভিসায় আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে অনেকেই আমেরিকায় যেতে আগ্রহী হন। আমেরিকার মেডিকেল ভিসার জন্য প্রথমে আবেদন ফি হিসেবে ২২ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এই আবেদনের সময় মেডিকেল রিপোর্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিও জমা দিতে হয়। পরবর্তী ধাপে আমেরিকার ভিসার জন্য নির্বাচিত হলে বিমানের টিকিট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ছোটখাটো খরচ বাবদ আনুমানিক সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা বিমান ভাড়া কত
বর্তমানে যারা বাংলাদেশ থেকে কাজের বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমেরিকা যেতে চান, তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক। বিশেষ করে, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার বিমান ভাড়া সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি, অন্যথায় প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই কারণে অনেকেই অনলাইনে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা বিমান ভাড়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করেন। তাই সবার সুবিধার্থে, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা বিমান ভাড়া কত, তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
📌আরো পড়ুন👉বাংলাদেশ থেকে কাতার বিমান ভাড়া কত
- নিউইয়র্ক বিমান ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৬০০ ডলার হয়ে থাকে।
- শিকাগো বিমান ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৬৫০ ডলার হয়ে থাকে।
- বোস্টন বিমান ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার হয়ে থাকে।
- ওয়াশিংটন বিমান ভাড়া ১৬০০ থেকে ১৮০০ ডলার হয়ে থাকে।
- লাস বিমান ভাড়া ১৮০০ থেকে ১৮৫০ ডলার পহয়ে থাকে।
- ফ্রান্সিসকো বিমান ভাড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ ডলার হয়ে থাকে।
- লস অ্যাঞ্জেলেস বিমান ভাড়া ১৬০০ থেকে ১৯০০ ডলার হয়ে থাকে।
- হিউস্টন বিমান ভাড়া ১৭০০ থেকে ১৯০০ ডলার হয়ে থাকে।
- সিয়াটল বিমান ভাড়া ২১০০ থেকে ২২৫০ ডলার হয়ে থাকে।
আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চাকচিক্যময় জীবনের কারণে অনেকের কাছেই আমেরিকা একটি আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া যায়। বিশেষ করে স্টুডেন্ট ভিসা, আমেরিকান ভিজিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং বিভিন্ন কাজের ভিসায় বাংলাদেশ থেকে মানুষজন আমেরিকায় যায়।
তবে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য কিন্তু বিশেষ যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হলেও, ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও কঠোর। ভিসার যোগ্যতার মানদণ্ড আর্থিক সক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা, ভ্রমণ ও কাজের উদ্দেশ্যে আমেরিকা যেতে আগ্রহীদের অবশ্যই আমেরিকান ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। কারণ আমেরিকান ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
শিক্ষার্থীদের কাছে আমেরিকা একটি স্বপ্নের দেশ, কারণ উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য এটি পৃথিবীর সেরা গন্তব্য। আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো থাকা আবশ্যক:
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অফার লেটার
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- আইইএলটিএস স্কোর
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- বৈধ পাসপোর্ট
- রিকমেন্ডেশন লেটার
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
আমেরিকার ভিজিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
ভ্রমণকারীদের জন্য আমেরিকা একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এই বিশাল দেশে পর্যটকদের দেখার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থান বিদ্যমান। আমেরিকা ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আবদনকারীদের মধ্যে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো থাকা প্রয়োজন:
- বৈধ পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- ভ্রমণ পরিকল্পনা
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদ
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতা
- বিমান টিকেট ও হোটেল বুকিং
- ট্রাভেল রেকর্ড
- ট্রাভেল ইন্সুরেন্স
আমেরিকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
চাকরি এবং বসবাসের জন্য আমেরিকা একটি সেরা গন্তব্য হতে পারে। এই দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং কাজের বেতন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে ইচ্ছুক আগ্রহীদের মধ্যে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো থাকা আবশ্যক:
- বৈধ পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- জব অফার লেটার
- কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
- আইইএলটিএস স্কোর (যদি লাগে)
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
আমেরিকাতে কি কি কাজের চাহিদা বেশি
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে তা জানার পাশাপাশি আমেরিকাতে কোন কাজের চাহিদা বেশি, সেটিও জেনে নেওয়া উচিত। আমেরিকাতে সব ধরনের কাজেরই চাহিদা রয়েছে। তবে যারা বৈধ, যেমন পেয়ারপ্রাপ্ত বা গ্রিন কার্ড হোল্ডার, তাদের জন্য এক ধরনের স্যালারি ক্যাটাগরি এবং যারা অবৈধভাবে আছেন বা যাদের কাগজপত্র প্রস্তুত হয়নি, তাদের জন্য স্যালারির ক্ষেত্রে ভিন্ন ক্যাটাগরি প্রযোজ্য। যারা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্যও আরেকটি ভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে।
তবে আমেরিকাতে সাধারণত দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের কাজের চাহিদা বেশি। আমেরিকাতে যেসব কাজের চাহিদা বেশি, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
📌আরো পড়ুন👉কাতারে কোন কাজের চাহিদা বেশি
- কনস্ট্রাকশন সাইডে
- ইলেকট্রিশিয়ান
- Plumber
- পেইন্টার
- গ্রোসারী স্টোর জব
- তেলের পাম্পে জব
- আইটি স্পেশালিস্ট
- ডাক্তার
- নার্স
- ইঞ্জিনিয়ার
- ওয়েব ডেভলপার
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ড্রাইভিং
- শেইফ
- হোটেল বাই রেস্টুরেন্টে জব
আমেরিকা যাওয়ার সহজ উপায়
আমেরিকা বিশ্বব্যাপী “স্বপ্নের দেশ” হিসেবে পরিচিত। এটি উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা এবং ব্যবসার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। বাংলাদেশের বহু মানুষ উন্নত জীবন ও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
কিন্তু কঠোর ভিসা প্রক্রিয়া, যোগ্যতার শর্তাবলী এবং বিভিন্ন নীতিমালার কারণে এই স্বপ্ন পূরণ করা সব সময় সহজ হয় না। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং আমেরিকা যাওয়ার সহজ উপায় অনুসরণ করলে এই প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হতে পারে।
- আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই F1 ভিসা নিয়ে সহজে আমেরিকা যেতে পারে। তবে এর জন্য শিক্ষার্থীদের আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকতে হবে, যেমন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেভর্তির অফার লেটার, পর্যাপ্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা।
- আমেরিকা ওয়ার্ক ভিসা: বিদেশি কর্মীদের জন্য আমেরিকায় কর্মসংস্থানের বিভিন্ন কাজের ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে, যেমন: H-1B, L-1, O-1 ভিসা ইত্যাদি। কাজের ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে চাইলে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যেমন: চাকরির অফার লেটার, কাজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ভাষা দক্ষতা ইত্যাদি।
- আমেরিকা ভিজিট ভিসা: ভিজিট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটকদের আমেরিকার ভিজিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে: আর্থিক সক্ষমতা, উচ্চমানের পেশা এবং ভালো ট্রাভেল রেকর্ড ইত্যাদি।
- আমেরিকা বিজনেস ভিসা: উদ্যোক্তারা আমেরিকায় কমপক্ষে ৯ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে বিজনেস ভিসা নিয়ে যেতে পারেন। তবে এর পাশাপাশি অবশ্যই আমেরিকান নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- আমেরিকা ডিবি লটারি: আমেরিকার এই অভিবাসন প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৫ হাজার মানুষ আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পায়। এই ভিসা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রতি বছরের শেষে আমেরিকার ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে হয়।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে
আমাদের দেশে এমন অনেকে আছেন যারা আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বা যেতে চাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগেরই ধারণা নেই যে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে আসলে কত টাকা লাগতে পারে। আবার অনেকে এই খরচ জানার জন্য অনলাইনে অনুসন্ধানও করছেন।
- বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় সরাসরি বিমানে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ থেকে দুবাই এয়ারপোর্টে যেতে হবে। এই যাত্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।
- দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে আপনাকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য অন্য একটি বিমানে উঠতে হবে। এরপর দুবাই থেকে সরাসরি আমেরিকায় যাওয়া যায়।
- দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি আমেরিকা যেতে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময়লাগে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে মোট বিমানে আমেরিকা পৌঁছাতে আপনার প্রায় ২১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব কত কিলোমিটার
আপনারা যারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাতে যেতে চান, তাদের মধ্যে অনেকেই গন্তব্যের দূরত্ব কত কিলোমিটার, সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব কত কিলোমিটার। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব হলো ১৩,২১৯ কিলোমিটার।
আমেরিকা যেতে ielts কত পয়েন্ট লাগে?
আমেরিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা আইইএলটিএস স্কোরের প্রয়োজন হয়। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে হলে ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ লাগে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ৫.৫ আইইএলটিএস স্কোর দিয়েও আবেদন গ্রহণ করে থাকে।
ভিজিট ভিসা নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ থেকে ৬.০ লাগে। আর কাজের উদ্দেশ্যে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রয়োজন হয়। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আমেরিকা যেতে ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ প্রয়োজন। আবেদনকারীর আইইএলটিএস স্কোর যত বেশি হবে, তার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে।
সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
প্রশ্ন: আমেরিকার ১ ডলার বাংলাদেশের কত?
উত্তর: আমেরিকার ১ ডলার সমান বাংলাদেশের প্রায় ১২০ টাকা।
প্রশ্ন: আমেরিকা ভিসার দাম কত?
উত্তর: আমেরিকা ভিসার দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা ৯ লাখ টাকা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে আমেরিকার এম্বাসি কোথায়?
উত্তর: আমেরিকার দূতাবাস বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত। ঠিকানা: ১২ মাদানি এভিনিউ, ঢাকা ১২১২।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার সময়ের পার্থক্য কত?
উত্তর: বাংলাদেশের সময় আমেরিকার চেয়ে প্রায় ১১ ঘন্টা এগিয়ে।
লেখকের শেষ মতামত
বর্তমানে সরকারিভাবে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার সুযোগ কম থাকায় অনেকেই বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের কাছে যান। এতে অনেক অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশে অবস্থিত আমেরিকার ভিসা অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
