তিন চাকার অটো গাড়ির দাম: একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের সব শ্রেণীর মানুষ যাতায়াতের জন্য পায়ে হাঁটা কিংবা গরু বা ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভর করত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে দেশে নানা ধরণের যানবাহন দেখা যায়। এর মধ্যে মালামাল বহনের জন্য এক ধরণের আর যাত্রী পরিবহনের জন্য ভিন্ন ধরণের বাহন রয়েছে।

যাত্রী পরিবহনের বাহনগুলোর মধ্যে তিন চাকার অটোগাড়ি অন্যতম। এখন চাইলে খুব সহজেই এই অটোগাড়ির সাহায্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়। এই অটোগাড়িগুলো আবার বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে; কোনোটা ছোট, কোনোটা বড়, আবার কোনোটা মাঝারি আকারের।
তিন চাকার অটোগাড়ির আকার অনুযায়ী এর দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। বর্তমানে আগের তুলনায় এই অটোগাড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এখন একটি অটোগাড়ি কিনতে চাইলে আপনার বাজেট আনুমানিক ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে রাখতে হবে।
তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কত ২০২৬
মানবচালিত তিন চাকার রিকশার মোটরযুক্ত সংস্করণই হলো অটোগাড়ি, যা বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কম খরচে যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক উপায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই যানটি বেবি ট্যাক্সি, মোটো ট্যাক্সি, বাজাজ, টুক টুক, টম টম, মারুয়া, ইজি বাইক কিংবা ট্যাক্সির মতো নানা নামে পরিচিত।
📌আরো পড়ুন👉ওয়ালটন ফ্রিজ প্রাইস ইন বাংলাদেশ ২০২৬
তবে বাংলাদেশে এগুলোকে সাধারণত অটো, অটো রিকশা, সিএনজি বা এক কথায় অটোগাড়ি বলা হয়। বাংলাদেশ নিম্নবিত্ত আয়ের দেশ হওয়ায় অনেকেই এই তিন চাকার অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, আবার অনেকে জীবিকার তাগিদে নতুন করে এই গাড়ি কেনার পরিকল্পনাও করছেন।
অটো গাড়ির দাম কোম্পানি এবং গাড়ির ধরনের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি তিন চাকার অটো রিক্সার দাম শুরু হয় ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকা থেকে এবং তা প্রায় ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। অন্যদিকে, তিন চাকার অটো গাড়ির আনুমানিক দাম সাধারণত ২ লাখ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিন চাকার পুরাতন অটো গাড়ির দাম ২০২৬
তিন চাকার অটো গাড়ি আমাদের অতি পরিচিত একটি যানবাহন, যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে যাত্রী পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। তবে অনেক সময় এই তিন চাকার অটো গাড়িগুলো কিছুদিন চালানোর পর অনেকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়াও, অটো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে শোরুম কর্তৃপক্ষ তা কিনে মেরামত করে আবার বিক্রি করে।
মেরামত করা এই ধরনের তিন চাকার অটো গাড়ির দাম সাধারণত প্রায় ৭০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। অন্যদিকে, ভালো অবস্থায় থাকা পুরনো অটো গাড়ির দাম ন্যূনতম প্রায় ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তিন চাকার ইজি অটো গাড়ির দাম ২০২৬
বাংলাদেশে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই তিন চাকার ইজি অটো গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এই গাড়িগুলো যেমন সহজে যাতায়াতের সুবিধা দেয়, তেমনি মালামাল স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও একটি সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
সাধারণত, ইজি অটো গাড়ির দাম নির্ভর করে এর ব্যাটারির ধরন, ব্যাটারির ক্ষমতা এবং কোম্পানি ভেদে। তবে, বর্তমানে বাজারে নতুন তিন চাকার ইজি অটো গাড়ির আনুমানিক দাম শুরু হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও, অনেক শোরুমে পুরাতন ইজি অটো গাড়িও কিনতে পাওয়া যায়। এই পুরাতন গাড়িগুলোর দাম সাধারণত ৭০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিন চাকার ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ির দাম ২০২৫
বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলোতে যাত্রী পরিবহনের জন্য যে সকল যানবাহন বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো তিন চাকার অটো গাড়ি। এই অটো গাড়িগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ব্যাটারি চালিত।
বাংলাদেশে এই ব্যাটারি চালিত অটো গাড়িগুলো সাধারণত সারা রাত ধরে চার্জ করা হয়, যা দিয়ে গাড়িগুলো সারাদিন চালানো সম্ভব হয়।
ব্যাটারি চালিত তিন চাকার অটো গাড়ির দাম আনুমানিক সর্বনিম্ন প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন সময়ে ডিসকাউন্ট অফার থাকায় এর চেয়ে কম দামে গাড়িগুলো বিক্রি করা হয়। ডিসকাউন্ট চলাকালীন সময়ে প্রতিটি অটো গাড়ির উপর ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে।
তিন চাকার ইলেকট্রিক অটো গাড়ির দাম ২০২৬
বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলের লোকাল রাস্তাগুলোতে তিন চাকার ইলেকট্রিক অটো গাড়ি সচরাচর দেখা যায়। বর্তমানে, দানেন্দ্রা (Danendra) নামের একটি ভারতীয় স্টার্ট-আপ সংস্থা তিন-চাকার ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করে বাজারজাত করছে।
📌আরো পড়ুন👉রুম হিটারের দাম কত ২০২৬
এই গাড়িটি একবার সম্পূর্ণ চার্জ করা হলে আনুমানিক প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। তবে, অন্যান্য অটোর তুলনায় ইলেকট্রিক অটো গাড়িগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। এই ইলেকট্রিক তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বর্তমানে তিন চাকার ইলেকট্রিক অটো গাড়ির সর্বনিম্ন দাম প্রায় ৩ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও, কিছু ভিন্ন মডেলের ইলেকট্রিক অটো গাড়ির দাম আরও বেশি হতে পারে, যা ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্তও হতে পারে।
তিন চাকার মিশুক অটো গাড়ির দাম কত ২০২৬
তিন চাকার অটো গাড়িগুলোর মধ্যে মিশুক অটো গাড়ির একটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এই মিশুক গাড়িগুলো ব্যাটারি এবং সিএনজি—উভয় দ্বারাই চালানো যায়। বিশেষ করে সিএনজি দ্বারা মিশুক অটো গাড়ি চালালে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা সম্ভব হয়।
এছাড়া, মিশুক অটো গাড়িগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি বর্তমানে সকলের কাছে অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই গাড়িগুলোর পরিচালনা খরচও খুবই কম। তবে, কোম্পানির উপর ভিত্তি করে মিশুক অটো গাড়িগুলোর দাম কম বেশি হয়ে থাকে।
বর্তমানে তিন চাকার মিশুক অটো গাড়ির আনুমানিক সর্বনিম্ন দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, মিশুক অটো গাড়ির বর্তমান চাহিদা বিশ্লেষণ করে অনুমান করা যায় যে এর দাম পূর্বের তুলনায় আরও অনেকটা বাড়বে।
তিন চাকার প্যাডেল রিকশার দাম কত ২০২৬
বাংলাদেশে একসময় প্যাডেল রিকশার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু, বর্তমানে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা এবং অন্যান্য অটো গাড়ির ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় প্যাডেল রিকশার কদর এবং ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
📌আরো পড়ুন👉৫০ থেকে ১০০০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম কত ২০২৬
বর্তমানে একটি প্যাডেল রিকশার বাজারদর প্রায় ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। অনেকেই এখন তাদের প্যাডেল রিকশায় মোটর এবং ব্যাটারি যুক্ত করে সেটিকে অটো রিকশায় রূপান্তরিত করছেন।
এই প্রবণতার কারণে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল রিকশা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে। তবে, যারা কম খরচে একটি বাহন কিনতে চাইছেন, তারা প্রাথমিকভাবে একটি প্যাডেল রিকশা কিনে পরে এটিকে একটি অটো রিকশায় রূপান্তর করার সুযোগ নিতে পারেন।
অটো গাড়ি কেনার আগে যা জানা দরকার
অটো গাড়ি বা অটো রিকশা কেনার পরিকল্পনা থাকলে এই কয়েকটি বিষয়ে নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. বাজেট ঠিক করুন: সবার আগে আপনার আর্থিক সামর্থ্য বুঝে একটি নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে ফেলুন। সাধারণত, একটি নতুন গাড়ির জন্য দেড় লক্ষ টাকা ১,৫০,০০০ থেকে দুই লক্ষ টাকা ২,০০,০০০ এবং একটি পুরনো গাড়ির জন্য আশি হাজার ৮০,০০০ থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা ১,২০,০০০ পর্যন্ত বাজেট রাখতে হতে পারে।
২. ব্যাটারির স্থায়িত্ব: যেহেতু ব্যাটারিচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যাটারিই প্রধান, তাই এটির আয়ুষ্কাল সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। সাধারণত ব্যাটারিগুলো ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত টেকে। তাই, এরপরে ব্যাটারি পরিবর্তনের জন্য যে খরচ হবে, তা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
৩. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: গাড়ি চালালে তার দেখভাল বা রক্ষণাবেক্ষণের একটি খরচ সবসময়ই থাকে। অটো গাড়ির ক্ষেত্রে এই খরচটি একটু বেশি হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি কোনো পুরনো গাড়ি কেনেন।
৪. যাত্রী বহনের ক্ষমতা: আপনার কতজন যাত্রী বহন করার প্রয়োজন, তা বুঝে গাড়ি নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন, সাধারণ অটো গাড়িতে ৬-৮ জন যাত্রী এবং অটো রিকশায় ৩-৪ জন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারে।
৫. ডিলারের সাথে কথা বলুন: সর্বশেষ দাম এবং বর্তমানে কী কী বিশেষ ছাড় বা অফার চলছে, সে সম্পর্কে জানতে স্থানীয় ডিলারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিন।
এই বিষয়গুলো বিবেচনা করলেই আপনি আপনার জন্য সঠিক অটো গাড়ি বা রিকশাটি বেছে নিতে পারবেন।
আমাদের শেষ মতামত
বর্তমানে তিন চাকার অটো গাড়িগুলো কিন্তু বেশ সহজলভ্য এবং খুব দ্রুত চলাচলের জন্য দারুণ একটা উপায়। দামও এখন মোটামুটি হাতের নাগালে। তবে, আপনি যদি ব্যাটারিচালিত অটো গাড়ি কেনার কথা ভাবেন, তাহলে কিন্তু সবার আগে ব্যাটারির দিকে নজর দিতে হবে। কারণটা খুব সহজ: ভালো মানের ব্যাটারি কিনলে সেটার স্থায়িত্ব বাড়ে।
এতে ঘন ঘন ব্যাটারি পাল্টানোর ঝামেলা আর খরচ দুটোই অনেক কমে আসে। আপনি যদি সত্যি অটো গাড়ি কিনতে চান, তবে কেনার আগে আপনার বাজেট, ব্যাটারির সম্ভাব্য খরচ এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ভেবে দেখুন। আমাদের এই আলোচনাটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে বলেই আশা করি।
আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমরা সবসময় আপনার জন্য প্রস্তুত। ধন্যবাদ!